অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জনের প্রাণহানি

অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত ও ৮১৫ জন আহত হয়েছেন। রেল ও নৌ-পথে আরও ৮৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্ঘটনার বিস্তারিত পরিসংখ্যান ও প্রতিরোধে করণীয় জানতে পড়ুন।

অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জনের প্রাণহানি

প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। গত অক্টোবর মাসে দেশে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে নিহত হয়েছেন ৪৭৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৮১৫ জন। রেলপথে ঘটে ৬৩টি দুর্ঘটনা, যাতে নিহত হয়েছেন ৭৬ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪ জন। নৌ-পথেও ১৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন, আহত হয়েছেন ৩৬ জন, এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটি জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সংগঠিত দুর্ঘটনার তথ্য পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন নিহত এবং ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই ঘটেছে ১৩৮টি, যাতে নিহত হয়েছেন ১৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন ২৩৯ জন।

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয়

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন:

  • আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য: ১৭ জন
  • চালক: ১৪৯ জন
  • পথচারী: ১৩৭ জন
  • পরিবহন শ্রমিক: ৫১ জন
  • শিক্ষার্থী: ৭৩ জন
  • নারী: ৭৬ জন
  • শিশু: ৬২ জন
  • চিকিৎসক: ৫ জন
  • সাংবাদিক: ৯ জন
  • রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী: ১৩ জন

নিহতের মধ্যে রয়েছেন ৬ জন পুলিশ সদস্য, ৩ জন সেনা সদস্য, ১২৪ জন পরিবহন চালক, ১১৭ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৫১ জন শিশু এবং ৪৯ জন শিক্ষার্থী।

দুর্ঘটনার ধরণ এবং যানবাহন

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার মধ্যে:

  • ২৪.৪১% মোটরসাইকেল
  • ২২.৫০% ট্রাক, পিকআপ এবং কাভার্ডভ্যান
  • ১৮.৫৪% বাস
  • ১৭.৯১% ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক
  • ৬.৬৫% নছিমন, করিমন এবং ট্রাক্টর
  • ৬.০২% কার, জিপ ও মাইক্রোবাস

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে:

  • গাড়ি চাপা: ৪৯.৪৮%
  • মুখোমুখি সংঘর্ষ: ২৫.২৫%
  • নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া: ১৪.৭৭%
  • ট্রেন দুর্ঘটনা: ০.২৫%

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে:

  1. ছোট যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
  2. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
  3. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ।
  4. যানবাহনের ডিজিটাল ফিটনেস সনদ প্রদান।
  5. ধীরগতির যান এবং দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা।
  6. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
  7. ফুটপাত এবং পথচারী পারাপারের জন্য সঠিক ব্যবস্থা রাখা।
  8. সড়ক পরিবহন আইন ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন।
  9. মানসম্মত আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
  10. মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল করার উদ্যোগ নেওয়া।
  11. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা।

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।