পটুয়াখালীতে অজ্ঞান পার্টির বরিশাল আঞ্চলিক প্রধানসহ গ্রেফতার -০৩

তালুকদার সোহাগ, পটুয়াখালী- পটুয়াখালীতে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট চক্রের বরিশাল আঞ্চলিক প্রধানসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বিপিএম,পিপিএম।
তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা কোন বাড়ির কোন পরিবারকে লক্ষ্য করে পরিকল্পনা নিয়ে, তাদের রান্না করা খাবারে মাত্রাতিরিক্ত চেতনানাশক মিশিয়ে পরিবারের সকলকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে। চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ অনৈতিক কর্মকান্ড করে আসছে। বিভাগের বাহিরেরও এদের সঙ্গে আরও দুর্বৃত্ত যুক্ত আছে। তবে ৩জনকে গ্রেফতার করলেও আরও ৫জনের নাম উল্ল্যেখ করে গ্রেফতারকৃতরা।তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আরো্ জানান, গত ৯ জুন রাত অনুমান ১টার দিকে দুমকি উপজেলার উত্তর মুরাদিয়া গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন দুমকি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি ঐ মামলায় উল্ল্যেখ করেন, তার বাসায় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ঘরের সামনে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ নাকে দুর্গন্ধ পান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাসার ভিতরে বিছানায় গিয়ে অচেতন হয়ে পরেন। তাহার স্ত্রী মোসাম্মাৎ শামসুন্নাহারের কান থেকে অজ্ঞাতনামা চোর বা চোরেরা কানের দুল খুলিয়া নেওয়ার সময় তাহার স্ত্রী, কে কে বলিয়া চিৎকার করিলে, আশপাশ থেকে স্বাক্ষিরা এসে ঘরের আলমিরা খোলা দেখতে পায়। যাহার মধ্যে ৩ভরি স্বর্ণালংকার ছিল যার আনুমানিক মূল্য ৩লক্ষ টাকা ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা অজ্ঞাত নামা চোর বা চোরেরা নিয়ে যায়।সাক্ষীদের ডাক চিৎকারে আরো সাক্ষীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইলে বাদীসহ তাহার বড় ভাই মরহুম মোস্তফা কামাল আহমেদের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পায়। ঐ ঘরের ভিতরে রুমের দরজা খুলে স্বাক্ষিরা দেখতে পান উক্ত ঘরের আলমিরার থেকে ৭ ভরি স্বর্ণালংকার যার বর্তমান মূল্য ৬লক্ষ টাকা এবং নগদ ১লক্ষ টাকাসহ একটি অ্যান্ড্রয়েড টেকনো মোবাইল ফোন অজ্ঞাত নামা চোর বা চোরেরা নিয়ে যায়।পরে স্থানীয়রা বাদী ও তার স্ত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উভয়কে পটুয়াখালী সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করেন এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের প্রেরণ করা হয়। ভিক্টিমদের অগোচরে অচেতন করার বিষাক্ত পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে স্প্রে করে অথবা রাতের খাবারের সাথে অচেতন করার বস্তু মিশিয়ে তাহাদের অজ্ঞান অচেতন করিয়া রাতের যে কোনো সময়ে সঙ্গোপনে অপথে গৃহে প্রবেশ করিয়া নগদ টাকাসহ মালামাল অজ্ঞাত চোর/চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় জসিম উদ্দিন বাদি হইয়া দুমকি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর পরই পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি দল ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে এবং ব্যাপক প্রযুক্তিগত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তদন্তকারী দল পটুয়াখালী জেলার গলাচিপার র্পুব ভাওয়ানিয়া এলাকা থেকে মো. মাহাতাব হোসেন মৃধাকে (৩৯) চোরাই মোবাইল ফোনসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সঙ্গবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য মাহাতাব শুরু থেকেই ঘটনা ভিন্ন দিকে ধাবিত করার জন্য একের পর এক কৌশলের আশ্রয় নেয় এবং তদন্তকারী দলকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্ঠা করতে থাকে। কিন্তু পুলিশ কৌশলী তদন্ত প্রক্রিয়া ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে, একপর্যায়ে সে পটুয়াখালীর দুমকি থানাধীন উত্তর মুরাদিয়া গ্রাম ও পটুয়াখালী জেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় চেতনানাশক প্রয়োগ করে ঘর থেকে চুরির বিষয়ে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেন এবং চক্রের অপরাপর সদস্যদের নাম প্রকাশ করেন। পরে তাকে আদালতে প্রেরন করা হলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন ।
মাহাতাব এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সূত্র ধরে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে গলাচিপা থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় এ চক্রের মূল হোতা মো. রাশেদুল মৃধাকে (৩২) গলাচিপা-রাঙ্গাবালী নৌপথের বোয়ালিয়া স্পিড বোড ঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মোঃ রাশেদুল মৃধা অত্র ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় চেতনানাশক প্রয়োগ করে চুরির সাথে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন এবং পটুয়াখালী শহরের টাউন কালিকাপুরে তাহার বসতঘরে চুরির কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক ওষুধ এবং চোরাই মাল গচ্ছিত আছে বলে স্বীকার করলে পুলিশ তাহার বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমান বিভিন্ন চেতনানাশক ঔষধ, চেতনানাশক গুড়া, চেতনানাশক সলিউশন, ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রপাতি, চোরাই কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ও সিম, চোরাই স্বর্ণ, চুরির কাজে ব্যবহৃত খেলনা পিস্তল, চোরাই স্বর্ণ মাপার ডিজিটাল মেশিন, চুরির কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের কালো জামা, প্যান্ট, মাঙ্কি টুপি, কালো মাস্ক এবং বিপুল পরিমাণে চোরাই নতুন থ্রিপিস উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও রাশেদুল মৃধা অন্তজেলা চোর চক্রের অপরাপর সদস্যদের নাম প্রকাশ করলে, চোরাই স্বর্ণ কেনাবেচার সাথে জড়িত তার দেখানো মতে রতন কর্মকারকে (৩৪) চোরাই মালামাল কেনাবেচার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম ও দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত আবুল বাসারসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়িার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
What's Your Reaction?






