শিল্পোন্নত দেশগুলোর নীতি-কৌশলে জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জনে বাধা
কপ-২৯ সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলোর চাপিয়ে দেওয়া নীতি-কৌশলে জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জন ব্যাহত হয়েছে। সম্মেলনের ফলাফল এবং জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য।
বৈশ্বিক জলবায়ু সমঝোতা সম্মেলন (কপ-২৯) অনুষ্ঠিত হয়েছে এই বছর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। তবে, সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর চাপিয়ে দেওয়া নীতি-কৌশল জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (সিপিআরডি) নেতৃত্বাধীন ৪২টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের জোট ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স-বাংলাদেশ’ এই বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা, সিপিআরডি’র নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, এবারের সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে তিনি এটিকে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম এবং সময়সীমা দীর্ঘ বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়া, এটি অনুদান নাকি ঋণ হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। এতে উন্নত দেশগুলোর জন্য দায়বদ্ধতার মাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থায়ন নীতিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বৃদ্ধির বিষয়টি আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি মুনাফা অর্জনের পথ তৈরি করতে পারে।
শামসুদ্দোহা আরো বলেন, এই সিদ্ধান্তে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কারণ এটি ঋণ এবং অন্যান্য নব্য-উদারনৈতিক আর্থিক উপকরণের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাস্তব সমাধান আসার পথে অন্তরায় সৃষ্টি হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক মোট কার্বন উদগিরণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন, কিন্তু কপ-২৯ থেকে আশাব্যঞ্জক ফলাফল আসেনি।” তিনি আরও যোগ করেন, সম্মেলন থেকে কার্যকর সমাধান না আসায় আগামী দিনে পরিবেশের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. সূর্বণ বড়ুয়া বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে উন্নত বিশ্বের গোপন শুভঙ্করের ফাঁকি তৈরি করার প্রবণতা লক্ষণীয়। এছাড়া, অন্যান্য বক্তারা কপ-২৯ এর মূল অর্জনগুলো তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন দেশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
সম্মেলনে আরও বক্তৃতা দেন কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীষ কুমার আগরওয়াল, দ্য ক্লাইমেট ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দিন ইলিয়াস, সিপিআরডির সহকারী রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মো. শেখ নূর আতায়া রাব্বি ও গবেষক সানজিয়া সামস। তারা জলবায়ু ন্যায্যতা এবং উন্নত দেশগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
এই সম্মেলনে বেশ কিছু দেশের জলবায়ু তহবিলের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, তা কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে যথেষ্ট কার্যকর হতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগের দরকার, তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো সেই দায়বদ্ধতা এড়ানোর জন্য নানা কৌশল নিয়েছে।