শিশুর মনোজগতের উৎকর্ষ সাধন করুন

শিশুর মনোজগতের উৎকর্ষ সাধন করুন

এখনকার শিশুরা খেলাধূলা ভুলে যাচ্ছে। ডিজিটাল আল্ট্রা রশি^র কাছাকাছি রাখা হচ্ছে শিশুদের। শিশু মনের বিকাশ ঘটাতে শিশুতোষ কর্মকা-ও কমে যাচ্ছে। বলা চলে শিশু বিকাশের উদ্যোগগুলো শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে। অথচ শিশুরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে বেড়ে ওঠার কথা ছিল। এখন খেলাধূলা, সংস্কৃতি চর্চার সব বিষয় আটকে গেছে মুঠোফোনের স্বচ্ছ ঝকঝকে কাঁচে। শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সের সব শিশুর হাতে শোভা পাচ্ছে বর্ণিল এই জাদুবাক্স। এসব কারণে শিশুরা অনেকটা রোবটের মতো আচরণ করছে। আগামীর ভবিষ্যত শিশুদের রক্ষায় শিশুর মনোজগতের উৎকর্ষ সাধনের দিকে নজর দেওয়া একান্ত জরুরী। তা না হলে শিশুরা আমাদের সকল ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ভুলে যন্ত্রমানব হিসেবে বেড়ে উঠবে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না কিংবা হতে দেওয়া উচিত নয়।

গবেষণায় উঠে এসছে, মুঠোফোন শিশুদের দূরন্তপানা ও খেলাধূলার আগ্রহ কমিয়ে দেয়। দ্রুত শিশুদের আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুর চোখের সমস্যা তিন থেকে চারগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন মাত্রাতিরিক্ত স্পার্টফোন ব্যবহারের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কেবল চোখের সমস্যাই নয় ঘটছে বিকাশজনিত সমস্যাও। অতিরিক্ত মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে অনেক শিশু সঠিক সময় কথা বলতে পারছে না। দেখাদিচ্ছে নানা উপসর্গও। তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে দৃঢ় হতে পারে না। বাবা-মায়ের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে শিশুরা মনোবিকাশের বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। চিকিৎসকরা মুফোফোনকে ডিজিটাল কোকেন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বাবা-মায়েরাও শিশুর হাতে এই যন্ত্র দিয়ে স্বস্তি ফেলছেন। কোন কোন বাবা-মা অহংকার করছেন তার শিশু মুঠোফোনে পারদর্শী। শিশুদের খাবার খাওয়ানো, গেইম দেখানোসহ সবধরণের ডিজিটাল ডিভাইজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এর ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে কোন খবরই রাখছেন না। একবারও তারা ভাবছেন না যে তার শিশুর মস্তিষ্ক আল্ট্রা রঞ্জেন রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিকারগ্রস্ত হয়ে বড় হচ্ছে প্রিয় সন্তান।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রাণ গোপাল দত্ত একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘একঘন্টা খাওয়ানোর জন্য শিশুর হাতে মুঠোফোন দেওয়ার ফলে শিশু একঘন্টা আল্টা রেডিয়েশনের মধ্যে থাকছে। এই সময় শিশু পুষ্টি যা গ্রহণ করছে অপুষ্টি নিচ্ছে তার বহুগুণ বেশি। একটা মুঠোফোন যত পরিমাণ রেডিয়েশন দিচ্ছে, একটা মাইক্রোওভেন তত পরিমান রেডিয়েশন দেয়। ১৫ মিনিট কথা বললে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইড তাপমাত্রা হয়ে যায়। তখন মস্তিস্কে প্রচ- কম্পন শুরু হয়। এই কম্পন শিশুদের মস্তিষ্কে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।’  তারা বলেছেন, শিশুদের কোনভাবেই মুফোফোন ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়।

শিশুদের মনোজগতের বিকাশের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করানো দরকার। দরকার খেলাধুলা, বইপড়া, সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত করা। শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখতে উদ্বুদ্ধ করা। দেশ ও দেশের মানুষ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেওয়া। মুকিআতযুদ্ধসহ ইতিহাস ঐতিহ্যর সঙ্গে পরিচিত করা। তাহলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে বেড়ে উঠবে। আমাদের শিশুদের সেই সুযোগ দিয়ে গড়ে তুলতে হবে।