আওয়ামী লীগ নেতা নানকের কাছে বরিশালের মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি অনুযোগ

আওয়ামী লীগ নেতা নানকের কাছে বরিশালের মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি অনুযোগ

বরিশালে আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ডলীর সদস্যকে কাছে পেয়ে পাল্টাপাল্টি অনুযোগ করলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র  সাদিক আবদুল্লাহ এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দুই নেতার অনুযোগ শুনেছেন বটে কিন্তু কোন মন্তব্য করেননি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরীর বটতলা আদম আলী হাজীর গলিতে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসভবনে অনুষ্ঠিত একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সিটি মেয়র ও পানি সম্পদ পতিমন্ত্রী পরষ্পরের বিরুদ্ধে ওই অনুযোগ করেন। 

গত বৃহষ্পতিবার জাহাঙ্গীর কবির নানকের মায়ের ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, আইনজীবী সমিতির সভাপতি আফজালুল করিম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুসহ দলমত ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শ’ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। 

নানকের মায়ের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত শেষে আগত অতিথিদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন সবাই। তাদের খাবারের শেষ মুহূর্তে টেবিলের কাছে খোঁজখবর নিতে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে জাহিদ ফারুককে উদ্দেশ্য করে নানককে বলেন, ‘দেখেন কাগু (কাক্কু) তার নির্বাচনে কত কিছু করলাম, কিন্তু উনি আমাদের নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ খবর নেন না। কর্মীরা আমার কাছে অভিযোগ করে- উনি আমাদের কর্মীদের সালামের উত্তর পর্যন্ত দেন না।’

খাবার শেষ করে মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আরে সাদেক তুমি তো আমার ফোনটা ডাইভার্ট করে রেখেছো, ফোন দিলে তো ফোনটাও ধর না। তাহলে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবো কিভাবে। তোমাকে ফোন দিয়েই তো পাওয়া যায় না, তুমি করোনার সময় ঘরের বাইরে বের হওনি। আমি তো মানুষের পাশে আছি পুরো সময়টা’। এ কথা বলতে বলতে দুই নেতা ধীর পায়ে হেটে অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে যেতে থাকেন। তাদের এগিয়ে দিতে সামনে আগাতে থাকেন নানক।

অন্যদিকে পাশের একটি টেবিলে খাচ্ছিলেন সিটি করপোরেশনের ৭জন কাউন্সিলর। তাদের দেখে হাসির ছলে মেয়র সাদিক বলেন, এখানে তো সব হাইব্রিড। এতে ওই টেবিলে থাকা সকলে বিব্রত এবং অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। মুহূর্তে মেয়র ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উনি বিপ্লব কাগু (কাকা) ছাড়া সবাই হাইব্রিড। এভাবে নেতাকর্মী ঠেলে ধীর পায়ে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীকে বাড়ির সামনে এগিয়ে বিদায় দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। 
এ বিষয়ে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে জাহিদ ফারুককে বিজয়ী করার জন্য আমিসহ নেতাকর্মীরা অনেক কাজ করেছি। এত কষ্ট করলাম, কিন্তু তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাই হ্যালো পর্যন্ত করেন না। তাদের খবর নেন না। এসব বিষয় নিয়ে কর্মীরা আমাকে প্রশ্ন করেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে বাইরে কোথাও কথা বলিনি। দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের কাছে আমাদের অভিমানের কথা বলেছি। ওই অনুষ্ঠানস্থলে হাইব্রিড অনেককে দেখেছেন বলে মেয়র জানান। 

সিটি মেয়রের অনুযোগ প্রসঙ্গে সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, আমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর দুইবার মেয়রের বাসায় গিয়েছি। তার লোকজন তাচ্ছিল্য করে কথা বলে। নানা প্রয়োজনে তাকে ফোন করেছি, কিন্তু তিনি আমার ফোন ধরেননি। এ কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখি এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। করোনাকালেও সাধ্যমতো নেতার্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। বরং আমি রাস্তায় বের হলে কারও সালামের অপেক্ষায় থাকি না, নেতাকর্মীদের আগে সালাম দিয়ে থাকি। 

দুই নেতার অনুযোগের বিষয়ে জানতে বরিশালে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত দুটো মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

তবে বরিশালে নানকের ঘনিষ্ট সহোচর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন সিকদার জানান, তিনি (নানক) বরিশালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়ে কোন বক্তব্য দেবেন না।