ইউপি নির্বাচনেও দিতে হবে হলফনামা

এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তথ্য সংবলিত হলফনামা দিতে হবে বলে রায় এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। আগামী ইউপি নির্বাচনের আগেই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর বৈধতা ঘোষণার রায়ে এমন নির্দেশনা এসেছে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের হলফনামা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুধু তথ্য সংবলিত ও প্রার্থীর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে এখন থেকে ইউপি নির্বাচনেও প্রার্থীদের হলফনামা দিতে হবে।
আইনজীবীদের তথ্য মতে, ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ার অভিযোগে গত বছরের ২১ অক্টোবর ফটিকছড়ির বখতপুর ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুকুল আজমের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হলেও তা খারিজ হয়। মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফারুকুল আজম। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ৩১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে তাকে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ ও ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অপর প্রার্থী মো. সোলায়মান লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করলে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিতের পাশাপাশি নির্বাচন সংক্রান্ত গেজেট স্থগিত করে আদেশ দিয়ে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।
সোলায়মানের করা আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ৬ মার্চ আপিল বিভাগ এক আদেশে হাইকোর্টের দেওয়া রুল নিষ্পত্তির আদেশ দিয়ে মামলাটি হাইকোর্টে পাঠায়। এর ধারাবাহিকতায় রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ রায় দেয়।
রায়ে ফারুকুর আজমের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে ভোট গ্রহণের নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও মো. জাহেদ উল আনোয়ার। অপর প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আব্দুর রহমান। ইসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
রায়ের বরাতে অ্যাডভোকেট জাহেদ উল আনোয়ার দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অন্য নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীদের জন্য ৭টি তথ্য সংবলিত হলফনামার ফরম রয়েছে। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে কোনো হলফনামা নেই। এখানে শুধুমাত্র প্রার্থীর স্বাক্ষর সংবলিত এক পৃষ্ঠার একটি প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিধান রয়েছে। ইউপি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী হলফনামা দাখিল করে না- শুনানি কালে এটি হাইকোর্টের দৃষ্টিগোচর হলে আদালত এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনানিতে বলেছি, ২০০৯ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আইনের ২৬ (৩) ধারায় হলফনামার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ (সংশোধিত ২০১৬) এর ১২ (গ) (আ) ধারায় প্রত্যয়ন পত্রের কথা বলা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছেন, আইন বিধিমালার ওপরে প্রাধান্য পাবে। আগামী ইউপি নির্বাচন থেকেই আদালতের রায়ের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’