ডাকের সাজে বরিশালে দেবী দুর্গা

ডাকের সাজে বরিশালে দেবী দুর্গা

বরিশালে  ডাকের সাজে দেবী দুর্গা সেজেছে। নগরীতে প্রতিবার  বিভিন্ন মন্ডপে অন্যান্য রুপে দেখা গেলে এমন সাজ বরিশালে প্রথম।

বরিশাল স্ব রোড শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ নিবাসে অগ্রগামী যুব সংঘের আয়োজনে শারদীয়  দুর্গাপূজার এমন আয়োজন।মহামারী করোনায় দুই বছর পর শারদীয় দুর্গা উৎসবে মেতেছে  তাই নগরীর পূজা মন্ডপ পাড়া নানা সাজে সজ্জিত । 

দেবী দুর্গা,লক্ষী,সরস্বতী, গণেশ,কার্ত্তিকসহ সকল সাজসজ্জা  ডাকের সাজে রাধা গোবিন্দ নিবাস মন্দিরে বিশেষ আকর্ষন সৃষ্টি করেছে দর্শনার্থীদের।

এ সাজ নিয়ে কথিত আছে পশ্চিম বাংলার শোভাবাজারের বাবু নবকৃষ্ণ দেবীর নতুন সাজ গড়তে জার্মানি থেকে রুপোর তবক ডাকযোগে আনে বলে ডাকের সাজ বলা হয়।

প্রতিমা গড়নকারী বাকেরগন্জ এলাকার কমল পাল ভোরের আলোকে বলেন সাধারণত এমন সাজে এসব অঞ্চলে প্রতিমা কম হয়,আমিও প্রথম এ ধরনের প্রতিমা গড়ালাম  শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ নিবাসের কর্মীরা এমন সাজ নয় মাস আগে আমায় দেখায় আমিও গড়তে সম্মত হই।

শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ নিবাস পূজা উৎযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন গোস্বামী ভোরের আলোকে জানান, এমন সাজে বরিশালে আগে কখনো দেখেনি।বাংলাদেশেও কম মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সাবেকি সাজে প্রতিমা বেশি গড়া হয়। আমরা এমন সাজের করবো সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্মাণ শিল্পীও গড়তে রাজী হয়।তবে দেবীর সাজ অনুসঙ্গ ভারত থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। দুই মাস আগে ভারতের কোলকাতার কুমারটলিতে গিয়ে সব উপকরণ ও সাজের পদ্ধতি নিয়ে আলাপ আলোচনা করে মুখমন্ডলের সাজ বানাতে দেই কুমার টলির পালদের কাছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্তঅঞ্চলে গিয়ে ডাকের সাজ সংগ্রহ করি, আসলে এ আয়োজন ভাবনা বছর খানেক আগের। 

দেবীদুর্গা প্রতিমার কাঠামোর পিছনে সাদা সূক্ষ্ম শোলার কাজ থাকে। এটিই ডাকের সাজ নামে পরিচিত। ধবধবে সাদা রঙের হয় ডাকের সাজ। এর মধ্যে প্রতিমার মূর্তি অসাধারণভাবে ফুটে উঠে।ডাকের সাজ অনেকে কাছে ঢাকের সাজ নামেও পরিচিত। দুর্গাপুজোর প্রচলণের পর থেকেই ডাকের সাজও শুরু হয়। পূজার ঐতিহ্যকে এটি সসম্মানে বহন করে।

ডাকের সাজের প্রচলনের ইতিহাস বলে পূজা উপলক্ষে  জার্মানি থেকে সর্বপ্রথম ডাকের মাধ্যমে শোলার কাজটি সরবরাহ করা হয়। সেই থেকেই এর নামকরণ হয় ডাকের সাজ।

১৭৫৭ সালের কথা, পলাশীর যুদ্ধের পর কলকাতা শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রথম দুর্গাপূজা হয়। বাঙালিরা এরপর থেকেই দূর্গাপূজা ঐতিহ্যের সঙ্গে উদযাপিত করে আসছে। তত্‍কালীন ব্রিটিশরাও ঐতিহ্যমণ্ডিত এই পুজোয় অংশীদার হয়।

ওই সময় দুর্গাপূজার সূচনা হয় আমিষ ভোজন থেকে সুরা পরিবেশন পর্যন্ত। বাঙালির সঙ্গে ইউরোপীয়দের আত্মিক যোগ স্থাপিত হয়। তখন থেকেই দুর্গা প্রতিমা সজ্জিত হয়ে আসছে ডাকের সাজে।

এছাড়াও পুরাণ কথানুযায়ী , হিমালয় কন্যা পার্বতীর বিবাহ স্থির হয় দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে। মহাদেবের ইচ্ছা ছিল বিয়েতে শোলার সাদা মুকুট পড়ার। তিনি দৈবিক শক্তির দিয়ে নরম জাতীয় এক উদ্ভিদের। যা পরে শোলা গাছ নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু কারিগর ও শিল্পী বিশ্বকর্মা অভ্যস্ত ছিলেন না নরম সূক্ষ্ম শোলার কাজে। এই সমস্যার কথা তিনি দেবাদিদেবকে জানান। মহাদেবের ইচ্ছায় তখন জলাশয়ে সৃষ্টি হয় সুকুমার নামক এক যুবকের। যিনি মালাকার নামে পরিচিত হন। সুকুমারের থেকে আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে মালাকার সম্প্রদায়। বর্তমানে যারা শোলার শিল্পী নামে পরিচিত।

এরপর থেকেই দুর্গার প্রতিমায় মাটি , বিভিন্ন ধাতু ও জরির কাজ থাকলেও ঐতিহ্যশালী পারিবারিক পূজায় এখনও ডাকের সাজের প্রচলন রয়েছে।
মন্দির দর্শনার্থী 

শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ নিবাস পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি পিন্টু দাস ভোরের আলোকে বলেন ,স্বাতীক নিয়মেই প্রতিবার পূজো করে থাকে এবারও তার ব্যাত্যয় ঘটেনি। এবার প্রতিমা গড়ায় গুরুত্ব দিয়েছি আমরা, প্রতিবারই দুর্গাপূজায় ব্যতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থাকে।