বরগুনায় জোয়ারে তলিয়ে গেছে বরইতলা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক ও গ্যাংওয়ে

পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রধান তিনটি নদ-নদীতে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পরে বাসিন্দারা।
উচ্চ জোয়ারে সদরের বরইতলা ফেরির সংযোগ সড়ক এবং গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের বিশখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার অংশে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ সেন্টিমিটার জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার রাতের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিষখালী-বলেশ্বর এই দুই নদ-নদীতে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়।
বরগুনা সড়ক ও জনপদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদরের ঢলুয়া ইউপির বরইতলা ফেরিঘাট সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি পর দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে নদীতে উচ্চ জোয়ারে বরইতলা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক ও গ্যাংওয়ে তলিয়ে থাকায় নারী পুরুষ ও শিশুরা কোমর সমান পানির মধ্যে দিয়ে তীরে উঠছেন। আবার কখনো নৌকা করে স্থানীয় জেলেরা পারাপার করছেন। মোটরসাইকেল, ট্রাক ফেরির পন্টুন থেকে রাস্তায় ওঠার সময় পানিতে আটকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া উচ্চ জোয়ারের কারণে সদর উপজেলার পোটকাখালী, বাওয়ালকার, বরইতলা, পশ্চিম গোলবুনিয়া, ডালভাঙা এলাকার বাঁধের বাইরে বসবাস করা মানুষের বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
জলিল নামের এক মোটর বাইক ড্রাইভার বলেন, সব সময়ই দেখি জোয়ারের পানি বাড়লে বরইতলা ফেরিঘাটের পল্টুনের গ্যাংওয়ে এবং সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এই জায়গা দিয়ে যাতায়াত করলে দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই কোমর সমান পানিতে নেমে খেয়া-পারাপার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি আমরা দাবি জানাচ্ছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এই দুর্ভোগ থেকে যেন রক্ষা করেন।
পাথরঘাটার পৌরসভার বাসিন্দা খেয়া যাত্রী মামুন জানান, এই অবস্থা দেখার মতো না, নদীতে পানি হওয়ার পর তারা ট্রলার নিয়ে উপযুক্ত জায়গা আমাদের নামিয়ে দিচ্ছে না, তারা আমাদের ফেরির পল্টনে নামিয়ে দিয়েছে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই মোটরসাইকেল চালু রেখে কোমর সমান পানিতে নেমে মোটরসাইকেল নিয়ে আমি রাস্তায় উঠেছি।
ঢলুযা ইউনিয়নরে গোলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা কমলা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, আজ ঘরে রান্না করা হবে না। হোটেল থেকে ভাত কিনে খেতে হবে, গরিব মানুষ কতদিন বা কিনে খাব। এখন থেকে ছয় মাস এভাবে জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে যাবে। আমাদের দুর্ভোগের কোনো শেষ নাই।
বরগুনা সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দীন বলেন, বরইতলা ফেরিঘাট সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে প্রধান তিনটি নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হয়। আরো দুই-এক দিন এই ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাবে।