মার্চকে ধারণ করে ‘মুজিববর্ষ’ পালন হোক
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালির মুক্তির আহ্বান দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যার যা আছে তা নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানে ক্ষিপ্ত হয় পাকিরা। ২৫ মার্চ তারা শুরু করে অপারেশন সার্চ লাইট নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। কিন্তু কোন হত্যায় বাঙালিদের দাবায়ে রাখতে পারেনি। কারণ মুজিবের টনিক ভাষণ সঙ্গে নিয়ে নয় মাস শসস্ত্র সংগ্রাম করে বাঙালি দেশ স্বাধীন করেছে। ছিনিয়ে এনেছে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। তাই তো মার্চের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মার্চ মানে বাংলাদেশ। মার্চ মানে আমাদের আত্ম পরিচয়।
এ বছর আমরা স্বাধীনতার ৪৯ বছরে পদার্পণ করবো। আবার এই মার্চেই আমাদের রাখাল রাজা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালন করবো। কারণ এই মার্চেই জন্মেছেন সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রোষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই মোটাদাগে অগ্নি ঝরা মার্চ বললেও, আমরা বলি আমাদের পুনর্জন্মের আরেক নাম মার্চ। এবছর মার্চের ১৭ তারিখ জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন হবে। পুরো বছর জুড়ে চলবে মুজিববর্ষ। এই মার্চে মুজিববর্ষ শুরু করে আগামী মার্চে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি পালন করবো। আমরা বিশ্বাস করি মুজিববর্ষ এবং মার্চ এক ও অভিন্ন সত্তা। যেকোনভাবেই মুজিববর্ষ পালন কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়। মুজিববর্ষ যেন মার্চকে ধারণ ও লালন করে পালন করা হয়।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে নানা ঘাত-প্রতিঘাত রয়েছে। তবে আমাদের মানসপটে যে বিষয়গুলো আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। যেখান থেকে আমরা অনুপ্রেরণা পেয়েছি সেগুলো মনে গভীরভাবে দাগকেটে আছে। যার মধ্যে ১৯৪৭ সালের ধর্মের নামে দেশ ভাগ। ১৯৫২ সালে মায়ের মুেেখর ভাষার জন্য সংগ্রাম এবং রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা। ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর ১৯৭১-এর মার্চ মাস বিশেষভাবে দাগকেটে আছে।
এই মার্চের স্মৃতি যেভাবে মনে আলোড়ণ তোলে, যেভাবে উন্মাদনার সৃষ্টি করে, যেভাবে উজ্জীবীত করে, সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো কঠিন। এটা উপলব্ধির বিষয়। আমাদের মার্চের উত্তাল ঘটনা উপলব্ধি করতে হবে। ঋতুচক্রের আবর্তনে মার্চ মাস এলে প্রথমেই মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭ মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণের কথা। বঙ্গবন্ধুর এই আগুন ঝরানো ভাষণ দেহের মধ্যে এক শিহরণ জাগায়। যে মানুষ আগেভাগেই বুঝেছিলেন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে মুক্তি আসবে না। তাই তিনি ৭ মার্চ ১৮ মিনিটের ভাষনে বাঙালির মুক্তি সনদ ঘোষণা করে গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেন। সেই বাঙালি জাতির দিক নির্দেশক মুজিবের জন্মশতবর্ষ আর মার্চ যেন কোন আনুষ্ঠানিকতার তকমায় পরিণত না হয়।
আমরা চাই, আমাদের গর্ব ও অহংকার মার্চ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে প্রোথিত হোক বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও চিন্তাকে অনুসরণ করে। রক্তঝরা মার্চ অনুরণিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ‘বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রূপের যে তার নাইকো শেষ’। মেধা মননে এই বিশ্বস প্রতিটি বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে যাক। তাহলে মুজিববর্ষ পালন সার্থক হবে। সার্থক হবে আমাদের ঐতিহাসিক মার্চের বিজয়গাঁথা।