ঈদের আনন্দ সবার দ্বারে পৌঁছাক

ঈদের আনন্দ সবার দ্বারে পৌঁছাক

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ... আসছে খুশির ঈদ।

রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসছে আনন্দ বার্তা নিয়ে। এই আনন্দ সবার দ্বারে পৌঁছে যাক। মুসলমানদের ধর্মীয় এই আয়োজন বিশ^মানবতার শান্তি-সমৃদ্ধির আয়োজন হোক। দীর্ঘ এক মাসের সংযম আমাদের আত্মার প্রশান্তি দিয়েছে। আবার এই সংযমই মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, দু:খ, কষ্ট, পাওয়া, না পাওয়ার বেদনাকে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। রমজানের সংযম কেবল একটি মাস নয়, গোটা বছর জুড়ে ধারণ ও লালন করতে হবে। আমরা যেন কথা ও কাজে বিনয়ী ও সংযমী হতে পারি সেই প্রত্যাশা করছি।  ঈদের খুশির পরম আনন্দ বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর মানুষের অন্তর ছুঁয়ে যাক। সবার জন্য সমাগত ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা।

মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা তো বটেই ঈদ আনন্দের সরিক হোক সব ধর্মের মানুষ। মহামিলনের বার্তা নিয়ে আসুক ঈদ। ধনী-গরীব, চাষী, মুটে, মজুর, কুলি সবার জন্য ঈদ আনন্দ বয়ে আনুক। ঈদ সবার মিলন মেলায় রূপ নিক। সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা ঈদের দিন এক কাতারে ঈদের নামাজ পড়তে দাঁড়াবো। সেই কাতার যেন কোন কারণে ভেঙে না যায়। এক সারিতে দাঁড়িয়ে যেন আমরা বলতে পারি ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...।’

কাজী নজরুল ইসলামের এই গান ঈদের খুশিতে আমরা সবাই গাই। কিন্তু গানের সব স্তবকের সঙ্গে নিজেকে মিল রেখে ঈদ পালন করতে কি পারি? এখনো ঈদ সবার জন্য হয়ে উঠতে পারেনি। ধনীদের ঈদ আর খেটে খাওয়া মানুষ, দরিদ্র, চাষাÑভূষার ঈদের মধ্যে বিস্তর ফারাক। অথচ এই মেহনতি মানুষ চাষী কিংবা কৃষকরাই আমদের মূল চালিকা শক্তি। আমরা ওপরে ওঠার ল্যাডার বা মই হিসেবে ব্যবহার করছি তাঁদের। ওপরে ওঠার পর আর নীচে তাকানোর সময় পাচ্ছি না।

এখনো কৃষক মাঠে ফসল ফলিয়ে তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। শ্রমিক মজুরের ঘামের দামে কেনা সম্ভাবনা ও অগ্রগতির সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে তারা। যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলো তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তাদের সন্তানের গায়ে মলিন পোশাক। কোন মতে তারা ঈদের কয়েকটা দিন পার করেন। আর মনে মনে প্রার্থনা করেন, হে রাব্বুল আল-আমিন তুমি ঈদ দিয়ো না। বারো মাস রোজা দাও। এমন মানুষদের সামনে আমরা বাহারী পোশাক পরে ঘুরে বেড়াবো। এমন ঈদ কাম্য নয়।

কৃষক ছাড়াও কম আয়ের মানুষ যারা আছেন তারা ঈদ না আসুক সেই কামনা করেন। কারণ ওইসব পরিবারের বাবা-মায়েদের ঈদ আনন্দের চেয়ে অনেকগুণ যন্ত্রণা দেয়। চোখের সামনে সন্তানের ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকার দৃশ দেখে সহ্য করতে পারেন না। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা করেন যেন ঈদ না আসে। একটি নতুন পোশাক কিনে দিতে না পেরে কন্যার দিকে তাকাতে পারছে না বাবা। মুখ লুকিয়ে কেঁদে সময় পার করেছেন। এসব বাবা-মায়ের সন্তানদের নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে না পারলে ঈদ কি সেই ভোদাভেদ ভুলে কাতারবন্দি হওয়ার আহ্বান জানাতে পারবে?

তারপরও ঈদ আসে, ঈদ যায়। এই ঈদে কৃষক, চাষী, মুটে, মজুর, কুলি সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা জানতে চাই। দৈনিক ভোরের আলোর পক্ষ থেকে সেইসব বাবা-মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। যারা এবারও সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারবেন না। যারা আমাদের সমৃদ্ধি এনে দিয়ে আমাদের ঈদকে স্বার্থক করে তুলেছেন। তাদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। 

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমর গানটি কণ্ঠে তুলে ফিরে যাবার চেষ্টা করবো ময়দান, মসজিদ থেকে স্বজনদের কাছে। ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ’। এই গান ধ্বণি প্রতিধ্বনি তুলবে গোটা বিশে^। ওই গান গেয়ে গেয়ে আমরা ঈদের দিনটি অতিবাহিত করতে চাই। একই সঙ্গে চাই, আগামী পৃথিবী যেন সকল অশুভ ছায়াকে ম্লান করে দিয়ে নির্মল আনন্দে ভরিয়ে দেয় আমাদের।

আসুন, আমরা সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই। আমার আপনার যা আছে সেটা নিয়ে সবাই যেন এক হয়ে এক কাতারে কাতারবন্দি হতে পারি। তাহলে আমাদের ঈদ আনন্দ স্বার্থক হবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় থাকলাম। 

ঈদ মোবারক।