ধর্ষণের বহুমাত্রিকতা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। শঙ্কার মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা। শিক্ষকের কাছেও নিরাপদ থাকতে পারছে না ছাত্রীরা। নানা কায়দায় ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা এবং ধর্ষণের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ধর্ষণের বহুমাত্রিকতায় অভিভাবকরা সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
চলন্ত বাসে দলবেঁধে ধর্ষণ করে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছ নার্সকে। এর আগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকালও ঝালকাঠিতে অস্টম শ্রেণি পড়–য়া শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে দুই বখাটে। এদিকে কিছুদিন ধরে এক স্কুল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানী করে আসছে। এখন স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার, বাস, লঞ্চ, স্টীমার, ট্রেনসহ গণপরিবহণেও নারীরা নিরাপদ নয়। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে পারিবারিক শিক্ষার দরকার। দরকার সামজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আমাদের সমাজে মাদকের ছোঁবলে তরুণ ও যুবকরা ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। এইসব যুবকরাই ঝুকে পড়ছে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে। এর সঙ্গে জঙ্গীবাদের উত্থানও আমদের চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় সেখান থেকে উত্তোরণ ঘটছে। এক সময় সমাজে নারীদের জন্য বড় আতঙ্ক ছিল অ্যাসিড নিক্ষেপ। সেটাও নিয়ন্ত্রণে আছে। মাদক, অ্যাসিড, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের পর বর্তমানে সামাজিক ব্যাধির নাম হচ্ছে ধর্ষণ। সমাজের প্রতিটি স্তরে ধর্ষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, অফিস, আদালত, পরিবার এবং সমাজ কোথাও নারী নিরাপদ থাকতে পারছে না। ৩ বছরের শিশু থেকে বয়ষ্ক নারীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কেবল কন্যা শিশুর নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পরছে তারা। অকালে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে অনেক কন্যা শিশুকে। তারপরও রক্ষা করা যাচ্ছে না। নারী ও শিশুরা নিরাপদ থাকতে না পারলে আমরা কি নিরাপদে থাকতে পারবো? বাংলাদেশটা কি ভালো থাকতে পারবে? সেই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবনে হাজারোবার উত্ত্যক্ত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অন্যদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ওই ছাত্রীর কামনা কন্যা শিশু ও শিক্ষার্থীরা যাতে ঘৃন্য এই লালসা থকে রক্ষা পায়। সেজন্য তাঁর নির্মম অভিজ্ঞতা ও লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণশাধ্যমে শিক্ষার্থী বলেছে ‘আমি বোরকা পড়ে থাকর পরও প্রতিনিয়ত নির্যাতন ও উত্ত্যক্তর শিকার হয়েছি। যা অনেক সময় খোলামেলা পোষাকে চলা নারীরাও শিকার হননি। অসহ্য হয়ে আমি মুখ খুলে জনসম্মুখে তুলে ধরলাম।’
শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই ওই শিক্ষার্থীকে। কিন্তু তারপরও কি রক্ষা পাচ্ছে আমাদের নারী শিক্ষার্থী ও শিশুরা? পাচ্ছে না। তারপরও প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের বলি হলো নুসরাত, শাহিনুরসহ অনেক নারী। কেবল তাই নয়। ধর্ষণ করে ঘরের মধ্যে আটকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো নুসরাতকে। একইভাবে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হলো শাহিনুরকে।
এখন এমন অবস্থা হয়েছে, ‘নারী তুমি যেখানেই থাকো আমার (কিছু সংখ্যক মানুষরূপী পশুর) বাঁকা দৃষ্টি তোমাকে আচ্ছন্ন করবেই।’ তুমি মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ^বিদ্যালয় পড়ো কি না সেটা বড় কথা নয়। তুমি বোরকা কিংবা টিশার্ট পড়ো কি না সেটাও বড় কথা নয়। বড় বিষয় হচ্ছে তুমি নারী। তোমাকে আমার নেতিবাচক দৃষ্টির কাছে ধরা দিতে হবে। তা না হলে তোমাকে পুড়িয়ে দেবো। কখনো আগুনে, কখনো অ্যাসিডে আবার কখনো বা বাস থেকে ফেলে। পুরুষতান্ত্রিক এই চিন্তা আমাদের সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
আমরা ধর্ষণের ঘটনায় শূন্য সহিষ্ণু নীতি চাই। বিচার ব্যবস্থা এবং আইন পেশায় যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদেরও এব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা দরকার। সামাজিক ব্যধি ধর্ষণের অভিষাপ থেকে আমরা মুক্তি চাই। এই কাজ কেবল সরকার কিংবা প্রশাসনের নয়, আমাদের সকলের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবার, সামাজ এবং রাস্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ আমাদের এই আতঙ্ক দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।