বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের ছয়জন সাংসদ শেষ পর্যন্ত শপথ গ্রহণ করে সংসদে যোগদান করেছেন। সাধারণ মানুষ এটাকা ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। এর মধ্য দিয়ে ওইসব সংসদীয় আসনে যে ভোটাররা বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন তাদের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে। আমরা চাইব বিএনপির এই সাংসদরা সংসদে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের মধ্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।
কেবল দায়িত্বশীল বিরোধী দল সংসদে না থাকার কারণে আমাদের সংসদ কার্যকর ও প্রণবন্ত হতে পারছে না। আমরা বিশ^াস করি, সংসদে যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে সংখ্যায় কম হলেও তা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সাংসদরা সেই দায়িত্বই পালন করবেন বলেই আশা করি।
আমরা এটাও আশা করি সংবিধানের বেধে দেওয়া সময়ের আগেই বিএনপির মহাসচিব এবং দলের নীতি নির্ধারক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শপথ গ্রহণ করে সংসদে যোগ দেবেন। সংসদে উত্থাপিত যাবতীয় বিলের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা দায়িত্বশীল সমালোচনা করতে পারলে বিলটি গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আলোচনা ও সমালোচান ছাড়া বিল অনুমোদন হলে তার প্রতি মানুষের নজর কাড়ে না। একজন মির্জা ফখরুল সংসদে থাকলে একচেটিয়া বিল উত্থাপন ও অনুমোদন করার ক্ষেত্রে একটু হলেও দায়িত্বশীল হবেন সরকার। মির্জা ফখরুল সেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে আমরা উপকৃত হবো। উপকৃত হবে রাজনীতি। আগামীতে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনেও সাধারণ মানুষ আগ্রহী হবে।
দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে কার্যকর সহনশীল রজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা দেখতে চায়। সংসদে কারা সংখ্যা গরিষ্ঠ, কারা সংখ্যা লঘু সেটা বড় কথা নয়। সব দলের সাংসদদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত সংসদ দেখতে চায় মানুষ। সেখানে কেবল বিরোধীতা করার জন্য যেন বক্তব্য শুনতে না হয়। বিরোধীতা যেন কোন বিশেষ দলের বিরুদ্ধে না হয়, যেন দেশের কল্যাণের জন্য হয়।
বিএনপির সাংসদরা সংসদের যোগ দেওয়াকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে ব্যখ্যা করছেন। আমরা ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে বিএনপির এই উদ্যোগকে সাদুবাদ জানাই। এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। সাধাণ মানুষদেরও এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানাতে চাই।
সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি বিএনপি দেশের অন্যতম বিরোধী দল। তারা দেশের মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনায় নিয়েই যেন রাজনীতি করেন। তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে যেন দল কিংবা সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে না পরে। একই সঙ্গে সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছেও আমাদের প্রত্যাশা অনেক। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা তাদের মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে যেন আরো একটু ইতিবাচক সাড়া দেন। আমরা চাই, একুশ শতকের বাংলাদেশকে ৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশে রূপ দিতে সব দল সমানভাবে ভূমিকা রাখবে। সেই পথচলার অন্যতম মঞ্চ হচ্ছে আমাদের মহান জাতীয় সংসদ। সেই জাতীয় সংসদ হোক রাজনীতির শিষ্টাচারের উদাহরণ। আমারা আমাদের সাংসদদের সঙ্গে থেকে সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে লাগতে চাই।