অশ্বিনী কুমারের নামে বরিশাল কলেজের নামকরণের দাবিতে উদীচীর স্মারকলিপি

অশ্বিনী কুমারের নামে বরিশাল কলেজের নামকরণের দাবিতে উদীচীর স্মারকলিপি

সরকারি বরিশাল কলেজের নাম অশ্বিনী কুমারের নামে নামকরণের দাবিতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ স্মারকলিপি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে ওই স্মারকলিপি প্রদান করে উদীচী।

আজ সোমবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসককেও পৃথক স্মরকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত। পশ্চাদৎপদ জনপদে শিক্ষা বিস্তারের জন্য বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোডে প্রথমে ১৮৮৪ সনে তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন বিদ্যালয়’। পরবর্তিতে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৮৮৯ সনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন কলেজ। এই মহাবিদ্যালয়ে নিজে বিনা বেতনে শিক্ষকতাও করেছেন অশ্বিনী কুমার। ১৯২৩ সালে কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যাওয়ার পর কালীবাড়ি রোডে অবস্থিত তাঁর নিজস্ব বাসভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে।

পাকিস্তান সরকারের আমলে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনটি সরকার রিকিউজিশন করে এবং তিনি সর্বদা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে তার বাসভবনে ব্রজমোহন কলেজের কসমোপলিটান ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৬ সনে তার বাসভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বরিশাল নৈশ মহাবিদ্যালয়’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নৈশ কলেজটিকে প্রথমে বরিশাল দিবা ও নৈশ কলেজে রূপান্তর করা হয়। পরে এটির নামাকরণ করা হয় ‘বরিশাল কলেজ’। কলেজটিকে ১৯৮৬ সনে জাতীয়করণ করা হলে কলেজটির নামাকরণ করা হয় ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’।

অবহেলিত এবং অন্ধকারে নিমজ্জিত বরিশালের রেনেসার অবতার অশ্বিনী কুমার দত্ত। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার কেবল বরিশাল নয়, বৃহত্তর বরিশালসহ নোয়াখালী অঞ্চলের শিক্ষা সংস্কৃতির পথ সুগম করেছেন। তিনি শিক্ষার আলোকে আমাদের আলোকিত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অশ্বিনী কুমারের বাড়িতে থাকা বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে তার নামে করার দাবি তোলা হয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট একই দাবি করা করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদীচী সেই পদক্ষেপের চূড়ান্ত রূপ দেখতে চায়। এই বিষয়টি কেউ যাতে অন্যদিকে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বরিশালের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বানও জানানো হয় স্মারকলিপিতে।

স্মরকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়,অশ্বিনী কুমার দত্তের নাম বরিশার কলেজের সঙ্গে যুক্ত করা কোন একক ব্যক্তির প্রচেষ্টা নয়। তাই এটাকে ব্যক্তিগতভাবে যারা দেখছেন তারা ভুল করছেন। এই দাবির পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। সমষ্টিগত দাবির ফসল সরকারের প্রস্তাবনা। সরকার এই দাবি বাস্তবায়নে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটি মহল সেই দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় নতুন করে দাবি তুলতে হচ্ছে। এই প্রস্তাবনার সঙ্গে সবাই থাকবেন এবং আছেন বলেই উদীচী মনে করে। সরকারি প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষে প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বানও জানায় উদীচী।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের হাত বরিশাল উদীচীর পক্ষে স্মারকলিপি তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় মিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ্বনাথ দাস মুনশী।  এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ, সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু বিশ্বাস, সহাসাধারণ সম্পাদক আশরাফুর রহমান সাগর, সঙ্গীত সম্পাদক মিঠুন রায়সহ অন্যরা।