বরিশালে ইলিশের মৌসুম:ভিন্ন পথে ইলিশ যাচ্ছে দেশের বাইরে, রপ্তানীর সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা

শ্রাবণ-ভাদ্র মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। ভাদ্রমাসের মাঝামাঝি সময় বাড়ছে ইলিশের সরবরাহ। তবে আশানুরূপ নয় দাবি ব্যবসায়ীদের। ইলিশ আসলেও এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসেনি দাবি ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন ইলিশের সরবরাহ থকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা অন্য মাছের সঙ্গে ইলিশ চালান করছে দেশের বাইরে। সেকারণে সাধারণ মানুষের নাগলের বাইরেই থেকে যাচ্ছে ইলিশ। অন্যদিকে ভিন্ন পথে ইলিশ বাইরে চলে যাওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই ইলিশ রপ্তানীর সুযোগ দাবি করেছেন তারা।
গত কয়েক দিন ধরে বরিশাল পাইকারী ইলিশ বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ছে দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, এই সময় যত পরিমাণ ইলিশের সরবরাহ থাকার কথা সেই পরিমাণ নেই। মূলত বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে ইলিশ শিকারে যেতে না পারা এবং নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে মিঠাপানির ইলিশও তেমন পাওয়া যাচ্ছেনা এমন দাবি জেলে ও ব্যবসায়ীদের। নি¤œচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় উপযুক্ত চারটি (জোবার) সময় সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে পারেনি জেলেরা। নি¤œচাপ কেটে যাবার পর আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় সাগরের মাছের আমদানী বাড়বে এমন ধারণা করছেন মৎস্য বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা।
ইলিশ বাজারের ক্রেতা মো. নয়ন অভিযোগ করেন, বাজারে ইলিশ যথেষ্ট আছে, কিন্তু দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ছোট মাছের কেজিও ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। বড় মাছের দাম আকাশ ছোঁয়া।
খুচরা বিক্রেতা সাব্বির হোসেন সহিদ বলেন, ইলিশ মাছ পাওয়া অনেকটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে বরিশালের আশপাশের কীর্তনখোলা, লাহারহাট, ভোলা নদীর মাছ আশা শুরু করেছে। লোকাল মাছ হওয়ায় দামও একটু বেশি।
ব্যবসায়ী মো. ইয়ার উদ্দিন শিকদার বলেন, এই মৌসুমে বরিশালের নদী থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ মন ইলিশ পাওয়া যেত। আমাদের নদীগুলো শহরের ময়লা এবং ফ্যাক্টরীর বর্জ্যতে দুষিত হয়ে গেছে। সেই কারেণ এখন ১০০ মন মাছ পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ইলিশের মৌসুম (সিজন) পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার মতে ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কমেছে।
ছোট ইলিশ ৩০ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে। এলসির মাছ ৪৪ হাজার টাকা, ১ কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার, ১ কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের মাছ বিক্রি হয়েছে ৫৪ হাজার এবং ১ কেজি ৫০০ গ্রামের মাছ বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজার টাকায়।
এদিকে বরিশাল জেলা মৎস্য মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নীরব হোসেন টুটুল বলেন, ইউরোপ আমেরিাকাসহ সারা বিশে^ বাংলাদেশের ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য মাছের সঙ্গে ইলিশ পাচার করছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেহেতু অবৈধ পথে ইলিশ পাচার হচ্ছে, তাই ইলিশ রপ্তানী উন্মুক্ত করা হোক। তাহলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আসবে অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে।
এই ব্যবসায়ীর দাবি পরিবেশ দুষণের কারণে নদীতে ইলিশ মিলছে না। ইলিশের মৌসুম পরিবর্তন হয়েছেও দাবি তার। ফলে আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। তাই দামও কমছে না।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ইলিশের সরবরাহ আরও বাড়বে, তখন দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেব। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, গত বছর ৪০ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এবার ৪১ হাজার মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে। ইলিশ রপ্তানীর বিষয় তিনি বলেন, সরকার ইলিশ মাছ রপ্তানী বন্ধ করেছে। এব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত না নিলে ইলিশ রপ্তানীর সুযোগ নেই।