হস্ত শিল্পে সফল নারী উদ্যোক্তা বাবুগঞ্জের নণী বাড়ৈ

নণী বাড়ৈ হস্ত শিল্পে একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা বাজার তিনমঠ এলাকার মৃত বিজয় বাড়ৈ’র স্ত্রী। কর্মঠ এই নারী এখন এলাকার অসহায় নারীদের মডেল। নানামুখি হস্ত শিল্পে নিজে সাবলম্বী হয়েছেন এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন সমাজের অনেক নারীদের। প্রায় ৩শত নারীকে নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী নণী বাড়ৈ।
বিয়ের পর স্বামীর সংসারের ভালই দিন কাটছিলো তার। হঠাৎ একদিন স্বামী অসুস্থ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। পঙ্গু স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ ৪ জনের সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। তার কাধেঁ পড়ে পুরো সংসারের দায়ীত্ব। অদম্য নণী বাড়ৈ সংসারের হাল ধরতে মায়ের কাছে শেখা হাতের কাজে মনোযোগ দেন। হঠাৎ একদিন স্বামী মৃত্যু বরণ করনে।
১৪ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে নিজ ঘরেই কাঁথা সেলাই ও গ্রামবাসীর জামা-কাপর তৈরির অর্ডার নিয়ে টেইলারিং(দর্জির কাজ) শুরু করেন। এতে ভালো সারা পান তিনি। ২২টিরও বেশি হাতের কাজ জানা নণী বাড়ৈ ২০০৭ সাল থেকে বানিজ্যিক ভাবে বাহারি রঙ্গের পুতি দিয়ে তৈরি শুরু করেন অকর্শনীয় পন্য। সেই থেকে আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে। পুতির ব্যাগ, মেয়েদের মাথার ব্যান্ড, চুরি ও বিভিন্ন প্রজাতির ফল সদৃশ্য পন্য। এছাড়া পাশাপাশি পাটের সুঁতো দিয়ে তৈরি করেন পাপোস, ওয়ালমেট ও নিত্য প্রয়োজনীয় রুচি সম¥ত পন্য। এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন মেলায় তার হাতের তৈরি পন্য প্রদর্শন করে প্রসংশিত হয়েছে বহুবার। এগুলো তৈরির কাচামাল ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতে হয় তাকে।
তিনি নিজ উদ্যোগে সমাজের অবহেলিত প্রায় ৩শত নারীদের আর্থিক ভাবে সাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই আজ সংসারের খরচ যোগাতে হাতের কাজ করে স্বামীকে সহযোগীতা করছেন ।
(কভিড-১৯)করোনা ভাইরাসের কারনে প্রদর্শণী মেলা বন্ধ থাকায় পুতি ও পাটের তৈরি পন্যের বাজারে ধ্বস নামায় চিন্তিত হয়ে পরেন তিনি। আয়ের উৎস্য কমে যায় তার।
আবারো তিনি নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে শুরু করেন। এবার চাহিদা অনুযায়ী বাজার বহনের জন্য প্লাস্টিক ব্যাগ ও কাগজ দ্বারা মিষ্টির ঠোঙা তৈরি করা শুরু করেন। কাজটিতে ভালো সারা পান তিনি। বিভিন্ন মার্কেট থেকে অর্ডার ক্রমশই বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার অধিনে ১০জন নারী প্লাস্টিক ব্যাগ ও মিষ্টির ঠোঙা তৈরির কাজ করছেন। প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করতে প্রথমে তিনি ব্যবহৃত সিমেন্টর খালি বস্তা সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো ধুয়ে পরিস্কার করে শুকিয়ে সেলাই মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন আকারের ব্যাগ তৈরি করেন এবং বাজারজাত করেন। এর পাশাপাশি সেলাই মেশিনে জামা-কাপর তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। বর্তমানে তার মাসে ১২-১৫হাজার টাকা আয় হয়। পুতির কাজটি শুরু করতে পারলে আয় ২০ হাজার টাকায় দাড়াবে বলে জানান তিনি। বর্তমানে তিনি একটি ১৫ জন সদস্যের নারী উদ্যোক্তা সংগঠন দাড় করাতে কাজ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নণী বাড়ৈ তার নিজ চেষ্টায় একটি আদর্শ বাড়ি তৈরি করেছেন। কাঠের তৈরি বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলের বাগান ও ফলের গাছ শোভা পাচ্ছে। পাশেই রয়েছে হাস-মুরগীর ঘর। এ যেন গ্রামের পরিপাটি একটি গুছানো বাড়ি।
তবে গল্পটি যত সহজে বলা গেলো বাস্তব ততটা সহজ ছিলোনা উল্যেখ করে বলেন, “নারী হিসেবে ব্যবসা করার বিষয়টি সমাজ খুব সহজ ভাবে মেনে নেয় না। তাও আবার গ্রামের মত জায়গা। পরিবার থেকেও সে সময় কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। স্বামী মারা যাওয়ার সময় তেমন কোন সম্পদ রেখে যায়নি। তাই অর্থই সে সময় বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।”
তিনি আরো আক্ষেপ করে বলেন, আমার হাতের কাজ দেখতে প্রায়ই বিভিন্ন এনজিও থেকে লোক আসে এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমাকে নিয়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে কথা বলায়। তবে কেউ আর্থিক সহযোগীতা করেনি। উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরে কয়েকবার আমার হস্ত শিল্পের প্রসার ঘটাতে সহযোগীতা কামনা করেছি কেউ কোন সহযোগীতা করেনি। সবাই প্রসংশা করেন এবং চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। আমি সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি যাতে সমাজের অবহেলিত নারীদের নিয়ে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে কাজ করতে পারি।