এগারোর হাত ধরে ঊনিশের তেরো ছুঁয়ে কুড়ির শুভেচ্ছা
এগারোর হাত ধরে ঊনিশের তেরো ছুঁয়ে আমরা কুড়ির দ্বারে। প্রিয় পাঠক, ২০১১ সালে ভূমিষ্ঠ হয় আজকের দৈনিক বরিশাল ভোরের আলো পত্রিকা। হঁটি হাঁটি করে আট বছর এগিয়ে চলার পর ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তের প্রথম দিনে আমাদের হাত ধরে ভিন্ন স্বদ ও গন্ধে প্রকাশিত হতে থাকে ভোরের আলো। অনেক দুঃখ-কষ্টের পরও বসন্ত বাতাসকে সঙ্গে নিয়ে ৩৫৬ দিন অতিক্রম করে ২০২০ সালের বসন্তে পা রেখেছি আমরা। আগামী ১৭ মার্চ আমরা ষ্পর্শ করবো মুজিব বর্ষ। তাই বলতে চাই, এগারোর হাত ধরে ঊনিশের তেরো ছুঁয়ে কুড়ির মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা। আজকের ফাগুনের প্রথম দিন আমরা আমদের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীদের বাসন্তি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আগামী দিনে আপনাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা সামনে হাঁটতে চাই।
প্রিয় পাঠক, জাতীয় দৈনিকগুলো যখন তাঁদের প্রচার সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত, সেই সময় আঞ্চলিক দৈনিক নিয়ে নতুনভাবে পথ চলা কতটা বাস্তবসম্মত এবং কঠিন কাজ সেটা আজ বলতে চাই না। তবে আঞ্চলিক দৈনিকগুলো যদি চেষ্টা করে তাহলে জাতীয় দৈনিকের মতো অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। দেশের অনেক আঞ্চলিক দৈনিক আছে, যারা জাতীয় দৈনিকের সমান মর্যাদা পান। কোন কোন ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনেও এগিয়ে আছেন। আঞ্চলিক দৈনিকের এই ধারায় পৌঁছাতে হলে সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতি নৈতিকতার দিকে নজর দেওয়া জরুরী। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করলে জাতীয়ভাবে নাড়া দেওয়া সম্ভব, তার প্রমাণও আঞ্চলিক অনেক দৈনিকের আছে। তাই যারা আঞ্চলিক দৈনিক শুনে একটু মুচকি হাসেন, তাদের বক্র হাসির জবাব দিতেও আঞ্চলিক দৈনিকগুলোর ভীত শক্ত হওয়া দরকার। সেজন্য চেয়ে চিন্তে শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন নেওয়া বন্ধ করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে খবর ছেপে বিজ্ঞাপন নেওয়া বন্ধ করতে হবে। সঠিক খবর ছাপা হলে, প্রতিবাদ দিলে প্রতিবেদকের বক্তব্যসহ বিনা অর্থে ছাপার সাহস রাখতে হবে।
আমরা বলতে চাই, আঞ্চলিক দৈনিককেও ব্যবসা সফল পত্রিকা করতে হবে। সেজন্য উদ্যোমী সংবাদকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে ভালোমানের সংবাদকর্মীর একটা আকাল চলছে। এই আকাল যে কেবল আঞ্চলিক দৈনিকে, তা নয়। এই আকাল জাতীয় দৈনিকের ক্ষেত্রের লক্ষ্য করছি। এখন আর কেউ সরেজমিন প্রতিবেদন করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ঘরে বসে নেট ঘেটে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার রীতি আমাদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক জাতীয় দৈনিকের ডাকসাইটে প্রতিনিধিদেরও মাঠে পাওয়া যায় না। তারা বিভিন্ন অনলাইন থেকে তথ্য নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করে বাহাবা নেন। এই ধারা বন্ধ না হলে নতুন সংবাদকর্মী সৃষ্টি হবে না। আর সংবাদকর্মী না থাকলে পত্রিকার মান ঠিক থাকবে না।
অনেকে হয়তো প্রশ্ন করবেন আঞ্চলিক দৈনিকের এত কথা বলার সাহস হয় কিভাবে? সাহস থাকলে জাতীয় আর আঞ্চলিক নয়, সত্য কথা চোয়াল শক্ত করেই বলতে হয়। সেই সাহস না থাকলে পত্রিকার পাতা উজ্জল হবে না। আমরা কারো কাছে করুণা চাই না। যদি ভোরের আলো পত্রিকা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়, তাহলে অবশ্যই পাঠকসহ বিজ্ঞাপন দাতারা আমাদের পাশে থাকবে। সেই সাহস নিয়ে সামনে যেতে চাই।
আমরা বলতে চাই, বরিশাল থেকে অনেকগুলো আঞ্চলিক দৈনিক প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে কয়েকটি দৈনিক বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত। ভোরের আলো তাদের মধ্যে একটি। ইতিমধ্যে বরিশাল থেকে প্রচারিত প্রথম সারির পত্রিকার একটি হিসেবে ভোরের আলো পাঠকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
আমরা জানি, বর্তমান সময়ে মুদ্রিত পত্রিকার পাঠক সংখ্যা কমছে। তারপরও সঠিক সংবাদ এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কারণে অনেকগুলো পত্রিকা প্রচার সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে। আমরা তাদের পাশাপাশি হাঁটতে চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে মুঠোফোন পাঠকদের জন্য আমাদের অনলাইন (www.daynikvoreralo.com) পত্রিকাও চালু রেখেছি। আমরা মুদ্রিত এবং অনলাইনে পাঠকদের সাড়া পাচ্ছি।
আমাদের যাত্রার এক বছর খুব একটা বেশি সময় নয়। আমাদের ইচ্ছা শক্তি আছে। সেই শক্তি দিয়ে জয় করতে চাই। নতুন নুতন সংবাদকর্মী আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। তাই আমরা সাংবাদিকতা বিষয়ে কর্মশালা আয়োজন করছি। মুঠোফোনে সাংবাদিকতায় আগ্রহীদের নিয়ে মুঠোফোন জার্নলিজম প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করবো। মোটকথা সঠিক সংবাদ পাঠকদের হাতে তুলে দিতে সবধরণের চেষ্টা আমাদের আছে।
পাঠক, আপনারাই হচ্ছেন আমাদের প্রাণ। আপনারা ভোরের আলোকে গ্রহণ করেছেন বলেই আজ আমারা এগিয়ে চলেছি। আগামীতেও আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। আবারো আপনাদের এগারোর হাত ধরে ঊনিশের তেরো ছুঁয়ে কুড়ির শুভেচ্ছা।