দক্ষিণ জনপদে নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে পায়রা সেতু

দেশের সড়ক যোগাযোগে নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সর্ব দক্ষিনের কুয়াকাটা এবং পায়রা সমূদ্র বন্দর পর্যন্ত ফেরী বিহীন সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পায়রা সেতুর উদ্বোধন ঘোষনার পর বেলা সাড়ে ১২টায় সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এর ফলে এই অঞ্চলে যান চলাচল বাড়বে এবং এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিনাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে বলে আশা সংশ্লিস্টদের। দির্ঘ প্রতীক্ষিত পায়রা সেতুর দ্বার উন্মোচন করায় খুশী বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
১ হাজার ১শ’ ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পায়রা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গতকাল সেতুর দক্ষিনপ্রান্তে পটুয়াখালীর দুমকী এলাকায় ছিলো সাঁজ সাঁজ রব। অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন বরিশাল অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সকাল ১০টায় গনভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষনের শেষ পর্যায়ে পায়রা সেতুর শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন। এর পরপরই স্থানীয় হাজারো জনতার ঢল নামে পায়রা সেতুতে। এ সময় বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।
সংশ্লিস্ট বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা এবং পায়রা সমূদ্র বন্দর পর্যন্ত যেতে সময় বাঁচবে। লাঘব হবে ভোগান্তির। দির্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
বেলা সাড়ে ১২টা থেকে সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর টোল দিয়ে সেতু পাড় হয়ে আনুষ্ঠানিক যান চলাচলের শুভ সূচনা করেন।
এ সময় প্রধান প্রকৌশলী বলেন, পায়রা সেতু সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। সরকারের এই সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্ব জনগনের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এবং বরিশাল ৪ আসনের এমপি পংকজ নাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষিনাঞ্চলবাসীর দির্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরন করেছেন। এই অঞ্চলের মানুষকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে এই এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তড়ান্বিত হবে বলে আশা করেন তারা। আগামীতে জনগন এর প্রতিদান বেবে বলেও তারা আশা করেন।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের ফলে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ চালু হলো। এতে ফেরীঘাটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে জনগন। সেতুর নান্দনিকতায় পর্যটকও আকৃস্ট হবে। দেশের একমাত্র সেতু পায়রায় নিজস্ব হেলথ মনিটরিং সিস্টেম রয়েছে। এর ফলে যে কোন ধরনের দুর্যোগ-দুর্ঘটনার আগাম তথ্য পাবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ২৬ তম কিলোমিটারে লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। শেষ হয় সম্প্রতি। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্টের (ওএফআইডি) যৌথভাবে এই সেতু নির্মানে অর্থায়ন করে। এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্ট্রেট নান্দনিক নকশায় নির্মিত সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪শ’ ৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। নদীর উভয়প্রান্তে এপ্রোচ সড়ক রয়েছে ১ হাজার ২শ’ ৬৮ মিটার। চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লং জিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড সেতুটি নির্মান করে।