বরিশালে পরিবহনের হাজারো শ্রমিক ছাটাই আতংকে

বরিশালে পরিবহনের হাজারো শ্রমিক ছাটাই আতংকে

বরিশালে পরিবহন সেক্টরের হাজারো শ্রমিক ছাটাই আতংকে ভুগছেন। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ২ মাসের অধিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকাকালে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়নি। ২ মাস পর পহেলা জুন থেকে ফের যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর শুরু হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই। করোনাকালে শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বরিশালের শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ এবং জেলা প্রশাসক।

গত ১ মাসে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীকে। দির্ঘদিনের কর্ম হারিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। এদিকে শ্রমিক ছাটাই হওয়ায় চাকুরী হারানোর আতংকে ভুগছেন বরিশালের প্রায় এক হাজার পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী।

জানা যায়, গত ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লা রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। এই সময়ে অধিকাংশ মালিক তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের কোন বেতন দেয়নি। এতে অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তারা। আশা ছিলো পরিবহন চলাচল শুরু হলে পরিস্থিতি পাল্টাবে। কিন্তু গত পহেলা জুন থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দূরপাল্লা রুটের অনেক কাউন্টারের শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই করা হয়েছে।

কোন কারণ ছাড়াই সাকুরা পরিবহনের টিকেট মাস্টার মো. জহির, কলারবয় মো. হাসু, মো. শহিদ, মো. মালেক, মো. পারভেজ, মো. মিজান ও শ্রী প্রশান্ত এবং সৌদিয়া পরিবহনের কলার বয় নিলয়কে জুনের প্রথম সপ্তাহে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পরিবহনেও অনেক শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই করা হয়েছে। হঠাৎ বেশ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাটাই করায় চাকুরী হারানোর আতংক সৃষ্টি হয়েছে অন্যান্য শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে।

চাকুরীচ্যুত মো. হাসু অভিযোগ করেন, ১৭ থেকে ১৮ বছর তিনি সাকুরা পরিবহনে কলার বয়ের চাকুরী করেছেন। করোনার কারণে মালিক চালাতে পারছেন না অজুহাত দেখিয়ে তিনিসহ অনেককে ছাটাই করা হয়েছে। হঠাৎ চাকুরীচ্যুত হওয়ায় প্রত্যেকে বিপাকে পড়েছেন। একই অভিযোগ করেছেন চাকুরীচ্যুত অন্যান্য শ্রমিক-কর্মচারীরা।

তারা বলেন, সরকার বাসের ভাড়া ৬০ বাগ বৃদ্ধি করেছে। এখন তাদের লোকসান হয় না। তারপরও নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাটাই করে তাদের বিপদে মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।

সাকুরা পরিবহন বরিশালের ম্যানেজার মো. আনিছুর রহমান বলেন, বরিশাল থেকে আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ট্রিপ বাস চলাচল করতো। এখন সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ট্রিপ দিচ্ছেন। এতেও যাত্রী হয় না। ১০-১২ জন যাত্রী নিয়ে একেকটি বাস গন্তব্যে যাচ্ছে। এতে খরচের টাকাও উঠছে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খরচ সাশ্রয়ের জন্য কিছু শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের আবার কাজে ফিরিয়ে আনা হবে।

বরিশাল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছাটাইকৃত শ্রমিকরা বিষয়টি শ্রমিক ইউনিয়নকে অবহিত করেনি। তারা লিখিতভাবে জানালে শ্রমিক ইউনিয়ন বিষয়টি নিয়ে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো। করোনা প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এই মুহূর্তে শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই অমানবিক। শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাটাই বন্ধ এবং ছাটাইকৃতদের ফের কাজে ফেরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ২ মাস বন্ধ থাকার পর পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। সরকার পরিবহনের ভাড়াও বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় পরিবহনের শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই করা যুক্তিসঙ্গত নয়। এই মুহূর্তে শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই করা অমানবিক। করোনাকালে অমানবিক কাজটি না করার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।