স্যোশাল মিডিয়ার যুগান্তকারী ব্যবহারের উদ্যোক্তা ‘শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি’

স্যোশাল মিডিয়ার যুগান্তকারী ব্যবহারের উদ্যোক্তা ‘শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি’

 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্যোশাল মিডিয়া তো আমরা সবাই ব্যবহার করি। কিন্তু এর বিকল্প ব্যাবহার কিংবা নিজের সৃজনশীল কাজগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য কতজন-ই বা ব্যবহার করি? তারপরও কেউ কেউ হয়তো ভালোভাবে কাজ করছে। তারই একটি উদাহরণ ‘শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি’। স্যোশাল মিডিয়াকে আরো কার্যকরী এবং আরো নিজের উপযোগী করে ব্যবহার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ‘শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি’ নামে এই সংগঠন। 


২০১৮ সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখ থেকে যাত্রা শুরু করা এই অর্গানাইজেশনটি। মাত্র এই কয় মাসে ফেইসবুক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১৭ হাজারেরও বেশি। 

শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি (Show The Creativity) এটি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি যেমন আপনার সৃজনশীল কাজগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন, ঠিক তেমনি আপনার যেকোন কাজের প্রয়োজনে আপনিও পছন্দমত খুঁজে নিতে পারবেন একজন সৃজনশীল ব্যক্তিকে। এতে করে আপনার যেমন একজন দক্ষ কর্মী খুঁজে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি সম্ভাবনা রয়েছে  আপনাকেও ভালো কোনো জায়গায় পৌঁছে যাবার।


 সাধারণত আমরা আমাদের ফেইসবুক প্রোফাইলটিতে কেবল নিজেদের ছবি আপলোড, বিভিন্ন পোস্ট বা চেক ইন দিতেই সময় চলে যায়। আবার অনেকেই দেখা যায় নিজেদের সৃজনশীল কিছু কাজ যেমন ড্রইং, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, কবিতা, লেখালেখিগুলো শেয়ার করে থাকি। কিন্তু আমাদের প্রোফাইলে সবার কাছে আমাদের সেই কাজগুলো পৌঁছনো হয় না। আবার এমন কোনো প্লাটফর্মও নেই যেখানে গিয়ে আমাদের সেই কাজগুলোকে কেউ দেখতে পারবে। শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি গ্রুপ এবং পেইজটিতে যুক্ত রয়েছেন এমন হাজারো সৃজনশীল কর্মীরা। ফলে যে কেউ এই প্লাটফর্মটিতে যুক্ত হয়ে এখানে তার কাজ শেয়ার করার মাধ্যমে তার কাজগুলো দেখাতে পারবে হাজার হাজার ফেইসবুক ইউজারকে। 

এই পেইজের উদ্যোক্তারা জানান, যে কেউ এই গ্রুপে যুক্ত হতে চাইলে ফেইসবুকে সার্চ অপশন টিতে গিয়ে ‘Show The Creativity’ লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন একটি পেইজ এবং একটি গ্রুপ। অথবা, facebook.com/Show.The.Creativity এই লিংকে গেলেই পেয়ে যাবেন অফিসিয়াল পেইজ। পেইজটিতে লাইক দিয়ে গ্রুপে সংযুক্ত (জয়েন্ট) করলেই যে কেউ তার সৃজনশীল কাজগুলোকে এই প্লাটফর্মটিতে শেয়ার করতে  পারবে।

তারা আরো জানান, শো দ্যা ক্রিয়েটভিটি এখন শুধু অনলাইনেই নয়, কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যাবহার, ফেইসবুকের যথাযথ ব্যাবহার ও এর উপকারী ও অপকারী  দিক তুলে ধরছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করতে, এছড়াও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন কার্যকরী দিক নিয়ে সচেতনতা ও দিক নির্দেশনা মূলক বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী,  কুমিল্লা এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজে শো দ্যা ক্রিয়েটভিটি তাদের এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। 

এছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রামের একটিভেশন করানো, অন্যান্য অর্গানাইজেশনগুলোর সাথে সমন্বয় করে ইতোমধ্যে অনেক প্রোগ্রাম, সেমিনার এবং অলেম্পিয়াড করেছে শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটি। এরই মধ্যে ৬ জন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং ২ জন আর্টিস্টকে পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করে দিতে সক্ষম হয়েছে শো দ্যা ক্রিয়েটভিটি। দেশের সর্বত্র ফেইসবুকের এই বিকল্প ব্যবহার এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে শো দ্যা ক্রিয়েটভিটি। 

এই পেইজের ফাউন্ডার এন্ড সিইও আর কে সোহান, বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বি.ইউ.প) তে গণ যোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশুনা করছেন। তার সেঙ্গ ১৪ জন এক্সিকিউটিভ মেম্বার রয়েছে। যারা এর বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। এছাড়া সারা দেশের  ১৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৫৬ জনের অধিক ক্যাম্পাস এম্বাসেডর তাদের ক্যাম্পাস এর শিক্ষার্থীদের কাজ পেইজের মাধ্যমে পৌঁছে দেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

শো দ্যা ক্রিয়েটিভিটির ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও আর কে সোহান বলেন ‘সবার গ্রহণযোগ্যতা, সহযোগিতা এবং আমাদের টিমের সদস্যদের কঠোর পরিশ্রম আমাদের এত অল্প সময়ে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে।’ ফেইসবুকে অনেক বড় বড় পেইজ, গ্রুপ রয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে অনেক অনুরোধ করেও দেখা যায় তারা আমাদের ক্রিয়েটিভ কাজগুলো আপলোড করতে চায় না। কিন্তু এই প্লাটফর্মে যে কেউ তার ক্রিয়েটিভ কাজগুলো হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে। 

আর কে সোহান আরো বলেন, ‘আমার ফ্যামিলি সাপোর্ট, বিশেষ করে আব্বুর আর্থিক সাহায্য। কারণ এই পেইজ চালাতে আমি কারো কাছে কোনো আর্থিক সাহায্য পাইনি, কিন্তু বাবা আমার পুরো প্লান শোনার পর খুশি হন এবং এখন পর্যন্ত সাপোর্ট দিয়ে চলেছেন। এছাড়া আমার এক্সিকিউটিভ মেম্বার যারা রয়েছে তারা সব দিক থেকেই আমাকে সার্বিক্ষণিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে বলেই আমরা আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’

এই পেইজের সফলতা: স্বল্প সময়েই ৬ জন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে বিভিন্ন কম্পানিতে পার্ট টাইমের জব দেওয়া হয়েছে। যাদের সবাইই স্টুডেন্ট। ২ জন আর্টিস্টকে কাজ করার জন্য প্লাটফর্ম করে দেওয়া হয়েছে। যারা ড্রয়িং বা স্কেচ করে তাদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন।  ড্রয়িং নিয়ে কাজ করার জন্য প্লাটফর্ম করে দিয়েছি। বিট বক্সিং এর একটা গ্রুপকে মিডিয়ার কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তারা এখন রেডিও এবং স্টেজ পার্ফম করছে।

এছাড়া সব সৃজনশীল ব্যক্তিদের কাজগুলো ফেইসবুকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বহু দর্শকের মাঝে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই না, ইতোমধ্যে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দেশের প্রায় ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীদের ইন্টারনেট এর বিকল্প ব্যবহার নিয়ে সচেতনা বাড়াতে বিভিন্ন সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো এমন প্রোগ্রাম নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের সোশাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড, চেক ইন, বা লাইক কমেন্ট এর জগত থেকে বের করে এর বিকল্প ব্যবহার শেখাতে সম্ভব হয়েছে এই পেইজটি। 




ভোরের আলো / ২৫ আগস্ট / অপি