করোনা মোকাবেলায় গণমাধ্যম-প্রশাসনের সমান ভূমিকা রাখতে হবে

করোনা মোকাবেলায় গণমাধ্যম-প্রশাসনের সমান ভূমিকা রাখতে হবে

করোনা আমাদের সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। স্থবির হয়ে গেছে জীবনযাত্রা। গোটা দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশেও করোনার প্রভাব বিস্তার ঘটছে। সবমিলে আমরা একটা ভৌতিকতার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছি। প্রতিটি মুহূর্ত শঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বের হলে মনে হয় যেন কোন হরর শো চলছে। আমরা এই ভৌতিক অবস্থা দেখতে চাই না। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। কিন্তু কিভাবে মুক্তি মেলবে? কি করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই চিন্তায় অস্থির গোটা বিশ্ব। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের পথ কেবল বাড়িতে থেকে প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাই আপনারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সহযোগী হোন। এটাই গণমাধ্যমকর্মীদের আহ্বান।

গণমাধ্যম বলার কারণ কি? কারণ হচ্ছে সরকার, প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কিংবা আহ্বান বার্তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে কারা? অবশ্যই সবাই স্বীকার করবেন এটা গণমাধ্যমের কাজ। কিন্তু সেই গণমাধ্যমের অবস্থান কোথায়? গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তাটুকুও অনেক সময় স্বীকার করা হচ্ছে না। তাতেও গণমাধ্যমকর্মীদের দুঃখ কিংবা ক্ষোভ নেই। ঝঁকি জেনেও তারা মাঠে থেকে করোনা মোকাবেলায় এক একজন যোদ্ধা হয়েছেন। কেউ কেউ করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। তারপরও তারা সংবাদ পরিবেশন করা বন্ধ রাখেনি। তাই করোনা মোকাবেলায় গণমাধ্যম-প্রশাসনের সমান ভূমিকা রাখতেই হবে।

গণমাধ্যম মনে করে করোনা মোকাবেলায় দায়িত্বশীল ভূমিকা অবশ্যই পালন করতে হবে। সেটা পালন করতে হবে সমন্বিতভাবে। আমরা জানি, আজকে চরম ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকরা কাজ করছেন। অনেক সময় স্বজনদের দূরে রেখে তারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন। করোনায় আক্রান্ত জেনেও তারা রোগি থেকে দূরে থাকতে পারছেন না। আমাদের উচিত চিকিৎসকদের মনোবল দৃঢ় করতে তাদের পাশে থাকা। একই সঙ্গে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা দরকার। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব এর পাশাপশি গণমাধ্যমও ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থেকে সহযোগিতা করে চলেছে। এই ঝুঁকির বাইরে নন নার্স, আয়া-বুয়া এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। অথচ করোনা মোকাবেলায় জনপ্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাবসহ অন্যান্য প্রশানের স্বীকৃতি থাকলেও গণমাধ্যমের স্বীকৃতি নাই।

গত ৯ এপ্রিল সরকার জরুরী পরিসেবার বিষয় উল্লেখ করে পরিপত্র জারি করেছে। ওই পরিপত্রের কোথাও জরুরী সেবার মধ্যে গণমাধ্যমের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে দেশের দুর্যোগ কিংবা সচেতনতায় গণমাধ্যম কি কোন কাজেই আসছে না? সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। রাষ্ট্র যদি এই দুর্যোগে গণমাধ্যমকে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে তো এটা ঝুঁকির ওপর চরম ঝুঁকি হয়ে দেখা দেবে। আমরা চাই জরুরী পরিসেবার মধ্যে অবশ্য অবশ্যই গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

গণমাধ্যমের বিষয়টি হয়ে দাঁড়িছে অনেকটা ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মতো। দুই বাচ্চা মায়ের দুধ পান করে সুঠাম দেহের অধিকারী হচ্ছে। আর তৃতীয় বাচ্চা মাথা ঠুকে ঠুকে রুগ্ন থেকে আরো রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মাঠে কাজ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গণমাধ্যম বিশ^াস করে ঝুঁকি কোন বিষয় নয়, সঠিক তথ্য দিয়ে রাস্ট্র ও সমাজের পাশে থাকতে হবে। তাই এই ঝুঁকির মধ্যেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পিছিয়ে নেই গণমাধ্যমকর্মীরা।

আমরা লক্ষ্য করছি, স্বীকৃতি থাকলেও আমাদের দেশের মাঠ প্রশাসনের সুরক্ষায় তেমন কোন উদ্যোগ নেই। অথচ করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় তারাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থির মধ্যেও চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। যখন গোটা দেশ একটি ভৌতিক চিত্রপট, তখনও ২৪ ঘন্টা মাঠে থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের পুলিশ প্রশাসন। যারা গোটা জাতিকে রক্ষায় দিন-রাত মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সুরক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদের মুখে কোনরকম একটা মাক্স থাকলেও ব্যক্তিগত সুরক্ষায় আর কিছুই নেই। তাই মাঠ প্রশাসনের এই সদস্যদের সুরক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। 

আমরা বলতে চাই, সামাজিক কিংবা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষদের সাহস যোগাতে যারা কাজ করছেন তাদের পাশে থাকতে হবে। ডাক্তার, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, গণমাধ্যমসহ জরুরী সেবার সঙ্গে যুক্ত সবার দায়িত্ব নিতে হবে। এই মুহূর্তে যারা কর্মহীন এবং দুঃস্থ, তাদের পাশে সহযোগী হয়ে যারা কাজ করছেন তাদেরও স্বীকৃতি থাকা দরকার। এব্যাপারে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। এটা যেমন সত্য। একই সঙ্গে সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। সেই কাজ যে যেভাবে করছেন তাদের পাশে থাকতেই হবে।