কলাপাড়ায় সেতু ভেঙ্গে খালে আট গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা খালের উপর নির্মিত আয়রণ সেতুটি ভেঙ্গে পড়েছে। বুধবার রাত ১০টার পর হঠাৎ বিকট শব্দে সেতুটি ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। এসময় সেতুর উপর থাকা শহিদুল হক ও রুহুল আমিন মৃধা খালে পড়ে আহত হয়। তাৎক্ষণিক সাঁতরে তারা তীরে উঠায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও কলাপাড়া উপজেলা সদরের সাথে আট গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে দূর্ভোগে পড়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। 

কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে পাখিমারা খালের উপর দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১১৬ মিটার দীর্ঘ এ সেতুৃটি নির্মাণ করা হয়। উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর সেতুটি নির্মাণ করে। পুরনো সেতুর মালামাল খুলে এ সেতুটি নির্মাণ করার শুরু থেকেই সেতু পার হতে মানুষের মধ্যে ছিলো ভয় ও আতংক।সেতু নির্মানের সময় খালে ঠিকভাবে লোহার খুঁটিগুলো পোঁতা হয়নি। লাগানো হয়নি খুঁটির সাথে আড়াআড়ি লোহার এ্যাঙ্গেল। একারনে সেতুতে মানুষ চলাচল করার সময় দুলতো। বুধবার রাতে হঠাৎ মাত্র দুইজন মানুষ নিয়ে সেতুটির প্রায় ১১০ মিটার খালে পড়ে তলিয়ে যায়।

দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া কৃষক রুহুল আমিন মৃধা জানান, পাখিমারা বাজার থেকে কুমির গ্রামের বাড়ি সেতু পার হয়ে যাচ্ছিলেন । সেতুর মাঝ বরাবর আসার পর হঠাৎ বিকট শব্দ করে সেতুর কুমিরমারা অংশ ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। সে ভয়ে পেছনের দিকে দৌড় দিলে তাও ভেঙ্গে পড়ে কাঁত হয়ে গেলে সে খালে পড়ে যায়। খালে প্রচন্ড ¯্রােত ও কচুড়িপানা থাকায় প্রায় দশ মিনিট অন্ধকারে পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার পর তীরে উঠতে সক্ষম হন।

স্থানীয়রা জানান, এ সেতু পার হয়ে পাশ্ববর্তী মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তেগাছিয়া গ্রামের মানুষ ছাড়া কুমির মারা, পূর্ব কুমির মারা, পাখিমারা, মজিদর্পু, এলেমপুর, বাইনতলা, ফরিদগঞ্জ ও সুলতানগঞ্জ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এ ইউনিয়নে সবজি সমৃদ্ধ হওয়ায় গ্রামগুলো থেকে সবজি নিয়ে পাখিমার বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ট্রাকে সবজি বিক্রি করত। কিন্তু সেতু ভেঙ্গে পড়ায় এখন সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সবজি চাষী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। 

কলেজ ছাত্র মো. বায়েজিদ, ইমরান ও তাসলিমা জানায়, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে তখন খেয়া পার হয়ে ঝড়,বৃষ্টির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। এতে দূর্ঘটনার আশংকা করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।

নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. নাসির মাহমুদ জানান, সেতু ভেঙ্গে পড়ায় বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ডিঙ্গি নৌকায় করে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান, মহিলা ভাইস শাহীনা পারভীন সীমা, এলজিইডি প্রকৌশলী মোহর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, সেতু ভেঙ্গে পড়ায় খবর তিঁনি পেয়েছেন। এখন বিকল্প উপায়ে চলাচল অব্যাহত রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে এলজিইডিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। 
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকৌশলী মো. মোহর আলী সমকালকে জানান, লবনাক্ত এলাকা হওয়ার কারনে লোহার সেতুর মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে সেতুটি ধ্বসে পরেছে। লবনাক্ত এলাকার কারণে আমারা ৩২টি গার্ডর ব্রিজ করা হবে। এরমধ্যে কিছু গার্ডর ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে। বাকী গুলোর মধ্যে ওই সেতুর তালিকা রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।