দেশে করোনায় গড়ে ৭০ জনের মৃত্যু

দেশে করোনায় গড়ে ৭০ জনের মৃত্যু

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগের দিন ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর গত ছয়দিনে দেশে গড়ে প্রতিদিন ৭০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে নতুন রোগী বাড়তে থাকায় মৃত্যুও বাড়ছে। আর কয়েকদিন ধরে যে পরিমাণ নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে- তাতে সামনের সপ্তাহে মৃত্যু আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

গত এক সপ্তাহ পর দুই দিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজারের নিচে। তবে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার খুব একটা কমেনি। এখনো রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ঘরে। আর গত দুই দিন ধরে নমুনা পরীক্ষা তুলনামূলক কিছুটা কমেছে।

এদিকে মার্চের মাঝামাঝি থেকে প্রায় প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। তবে গত দুই দিন ৩০ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।

অন্যদিকে শুরু থেকে রাজধানী ও ঢাকা বিভাগে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি। দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু আরো বাড়তে দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে হয়েছিল। এক মাস পর গতকালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ৫৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলো সরকার। যা লকডাউন হিসেবেই পরিচিতি পায়। গতকাল এর শেষ দিন থাকলেও সেটা আরো দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সব ধরণের গণপরিবহন ছাড়াও দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ থাকার কথা। একই সাথে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে বলা হয়েছিল। তবে কলকারখানা, কাঁচাবাজারসহ কিছু প্রয়োজনীয় দোকানপাট খোলা থাকারও সুযোগ রাখা হয়।

৫ এপ্রিল থেকে সড়ক, রেল, নৌ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে গণপরিবহন উৎপাদন, সেবার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হচ্ছে না। বিদেশি ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হচ্ছে না। অবশ্য এই বিধিনিষেধ দেয়া হলেও গত বুধবার থেকে মহানগরগুলোকে গণপরিবহন চলাচল করতে দেয়া হয়। আর সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালত, বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ করছে। এছাড়া শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চলছে।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ মাস থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক লকডাউন দিচ্ছে সরকার। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে।

তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, শুধু মাত্র লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এর সঙ্গে অন্যান্য পদক্ষেপ যেমন, রোগীদের চিহ্নিত করে আলাদা করতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইসোলেশন করতে হবে, কারা কারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দেশে রেকর্ডসংখ্যক ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮১৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৬ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৬ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ৭৩৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯০ জন।