প্রশ্ন ছাড়ে না আজও বিলাসীকে

প্রশ্ন ছাড়ে না আজও বিলাসীকে

দোষ গুণেই আমরা মানুষ। তবু একটু সুযোগ পেলেই একে অপরের দিকে আঙ্গুল তুলে সেই দোষারোপটাই করি। বলে দিতে চেষ্টা করি তোমায় আমি অপছন্দ করি। ঠিক সেই মুহূর্তেই যদি ভেবে নিতে পারতাম আমারও আছে ঠিক এমনই ভুল এমনই কিছু দোষ। সেই একই কারণে মানুষ আমাকেও অপছন্দ করে। তবে নিশ্চয়ই আমরা সত্যিকারের দোষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবো। তখনই আন্তরিক হবো সবাই যে যার মতো করে দোষ মুক্তির। তা যদি না পারি তবে দোষারোপ নামক এক খেলা দারুন জনপ্রিয়তা নিয়ে চলতে থাকবে আমাদের মাঝে। যেমনটা চলছে এখনো প্রতি পদে পদে। সকল কর্মে-ধর্মে, আহারে-বিহারে, আনন্দ-উৎসবে, বাদ-প্রতিবাদে। কেন হচ্ছে এমনটা সর্বত্র? আমরা কি তবে সকল ক্ষেত্রের সামগ্রিক সমন্বয়হীনতাকে হারিয়ে ফেলেছি? সত্যিই কি নিয়মনীতির তোয়াক্কা হচ্ছে না কোথাও? আসলে সমাজ রাষ্ট্র থেকে এ দুটো বিষয় হারিয়ে গেলে যা অবশিষ্ট থাকে, সেই উপলব্ধির নামটাই হলো দোষ। যার মোহাবিষ্ট সবাই। যার সমৃদ্ধ প্রয়োগের আঙ্গুল উত্তোলিত থাকে একের প্রতি অন্যের।

প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, তার প্রখ্যাত নূরলদীনের সারা জীবন কাব্য নাটকের এক জায়গায় লিখেছেন। ‘কার দোষ নাচে যেইজন, না তারে যে নাচায়?’ এটা পড়ে প্রায়শই মনে হতো দু’জনই দোষী। এই উপলদ্ধিটা ছিলো তার লেখার আংশিক পড়ে। পুরোটা পড়ে বুঝলাম আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। পূর্বের লেখার পরের অংশটা ছিলোÑ ‘না নাচিলে অন্যজন ধরিয়া নাচায়, যতক্ষণ পুতুলার মতো কোন মানুষ না পায়। একবার নাগাল পাইলে তার তারে ধরি নাচায় সবাই। কিন্তু নাচে যেইজন নাচে কেনে বেকুবতো নয়?’ ঠিকইতো, তা হলে নাচি কেন আমরা, বেকুব বলে?

এই যে সাবেক এম.পি গোমা-রনি, তার গলাচিপার বাড়ীটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো প্রশাসন। দেখে শুনে আমরা কেউ কেউ নাচলাম। অথবা কেউ না কেউ নাচালো। খবর পড়ে জানলাম ওটা সরকারের জায়গা। সেখানে কেউ বাড়ি তুলতে পারে না। এটাতো খুবই সত্য, যারপরনাই সত্য। তাহলে কি হলো? সেখানকার প্রশাসন কি বললো বাড়িটা গোমা রনি হঠাৎ আজ সক্কাল বেলা বাজার থেকে কিনে এনে সরকারের যায়গায় বসিয়ে দিলো। প্রশাসন ঘুম থেকে উঠে দেখলো সরকারের জায়গায় রনি বাড়ি বানিয়েছে। অতএব লোক ডাকো, গাইতি হাতুড়ি শাবল চালাও, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি গুড়িয়ে দিয়ে নিলামে বিক্রি করে দাও। গল্পটাকি এমন?

তা যদি না হবে, তাহলে এই বাড়ি যেদিন বনানো হয়েছিলো তখনকার প্রশাসনে কারা ছিলো? সেই সকল স্যারদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার জন্য তাদের কি কি ভাঙ্গা হয়েছে? তারা এখন কোথায়, এই অন্যায়ের জন্য পদোন্নতি নিয়ে এখন কোন চেয়ারে বসে আছেন, আর বাড়ি ভাঙ্গা দৃশ্যে লাইক মারছেন? আমরা কি জানি এমন কোন প্রশ্নের উত্তর? না কি এমন কোন প্রশ্ন যে হতে পারে সেটাও আমাদের বোধ-বুদ্ধির বাসা থেকে পালিয়ে গেছে? তাই কি এতোদিন পরে কুম্ভকর্ণদের প্রশাসনিক দৌরাত বাড়ি ভাঙ্গা দেখে বেকুবের মতো নাচছি? একবারও ভেবে দেখেছি কি সেদিন যে প্রশাসনের চোখের সামনে বাড়িটি বানানো হয়েছিলো আর আজ যে প্রশাসন ভাঙ্গছে তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন! আর আমরা বেকুবেরা কিছু না বুঝেই কেবল নাচছি আর প্রশ্ন করছি কার দোষ?

এই যে হিজলার এম.পি পংকজ দেবনাথের ফোনালাপ ফাঁস হলো। কে করলো সেটা? কার সাথে কথা হলো, কেন কথাগুলো সিনেমার খলনায়কদের ডায়লগকেও হার মানালো? কি অসাধারণ সেই  ডায়লগ-রাস্তার দুইধারের ঘাস বা গাছ কাটা নয়। সরাসরি মানুষ কাটার নির্দেশ! কি অসহনশীল রাজনীতি এবং তার নেতৃত্ব। সব থেকে অদ্ভুত বিষয় হলো, জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান সাহেবদের বোধেই আসছে না, এম.পি বিষয়টা কি। আর এম.পি মহোদয়রাও ভালো বুঝতে পারছেন না, এ কারা চেয়ারম্যান হলো কেমন করে? অথচ এই গল্পের নায়ক যে পুলিশ কর্মকর্তা সে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল। কেউ খুঁজতে এবং বুঝতে চাইলো না, এই মানুষটাকে অপারেট করলো কে? যার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হলো দলের এবং দলীয় রাজনীতির? কোথাও এ প্রশ্ন নেই। কারণ আমরা যে বেকুব, আসল কথা খুঁজতেই জানি না। কেবল কার দোষ জানতে চাই, আর অন্যের নির্দেশ মতো নেচে চলি। একেবারে সকল রকম তাল-ছন্দ-লয় ছাড়াই। তাই জানতে পারিনি বুঝতেও পারিনি এই খেলায় কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হলো মাননীয় এম.পি মহোদয়, আর কতটাই বা লাভবান হলো চেয়ারম্যান সাহেব। কি পুরষ্কার মিললো তার, যার মাধ্যমে ভাইরাল হলো এই গল্প?

এ রকম অনেক কিছুরই মুখোমুখি হচ্ছি আজকাল। ভালো বুঝতে পারছি না কেন বিষয়গুলো এভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। এর পরিণাম কি? এই যে গোমা রনি, কি চমৎকার লেখেন তিনি। ইতিহাস, আইন রাজনীতির উপরে বেশকিছু লেখা পড়েছি তার। বাদ যায়নি মোঘল হেরেমের গল্পও। আবার এই মানুষটাকেই দেখেছি, অর্থ আর ক্ষমতার দম্ভে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অপেক্ষমান সংবাদ কর্মীদের গায়ে পা চলিয়ে দিতে। তার নির্মম পরিণতিও দেখেছি।

আমরা এওতো জানি, দেখেছি পংকজ দেবনাথের ১/১১ পরবর্তী সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির আন্দোলনে কি সরব ছিলেন রাজপথে। সেই মানুষ সেই রাজনীতিক সেই নেতার এখন এ কোন আচরণ? কেন কথাবার্তা আচরণে এত অসহনশীলতা? কেন সবার মধ্যে সকল কিছু নিয়ন্ত্রণের অভিপ্রায়? একক আধিপত্যের সর্বত্র এ কোন অভিযাত্রা? কেন অন্তর্কলহ এতটা স্পষ্টরূপ নিচ্ছে? আমরা বেকুব তাই প্রশ্ন করি। তা নাহলে বুঝতে পারতাম এম.পির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো চেয়ারম্যানের খুটার  দড়িটা কোন হাতে নড়ে? স্পষ্টত বুঝতে পারতাম কার দোষ-গরু, গোয়াল না রাখালের?

এই দোষ গুলির দ্রুত সমন্বয়ের ব্যর্থতায় ক্ষমতার দড়িটা অদৃশ্য যে কোন সময়ে ছিড়ে যেতে পারে। তখন কার দোষ কার দোষ করে কোন লাভ হবে না। যেমনটা হয়নি ২০০১ এর নির্বাচনে। পরে বেশ কিছু নাম খুঁজে পওয়া গিয়েছিলো দোষীদের। তাতে হাত ছাড়া হওয়া ক্ষমতা আর হাতে আসেনি। তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেকটা সময়। তারপরেও বেকুব জণগণ এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানাতে পুনরায় তাদের সংগৃহিত ননি ভর্তি হাড়িটা তুলে দিয়েছে বর্তমান আওয়ামী রাজনীতির হাতে। তারা কি তার গুণগত মান লালন পালন করতে পারছে? তাহলে কারা ছড়ায় এমন সব খবর, ‘ছাগল চুরি করে আওয়ামী নেতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার’! কারা ছড়ায়-থানা থেকে রামছাগল ছাড়াতে এম.পির ফোন। ওসি তার কথা না শুনে ছাগল পাঠিয়েছে খোয়ারে? দেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল ব্যাসার্ধে এগুলো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদাহরণ মাত্র। আসলে যা ঘটিতেছে তাহলো, যে যেখানে যেভাবে পারছে দুহাত ভরে কামাচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দা। যাদের ৮০ ভাগই অনুপ্রবেশকারী, অর্থাৎ লেবাসলীগ্! যাদের হাতে সাধারণের ছাগলও এখন নিরাপদ নয়।

নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এখন রাজনৈতিক কুটনীতির বিচক্ষণতার প্রায়োগিক আঙ্গিকের স্বচ্ছ উদাহরণ দরকার। ‘সময় গেলে সাধন হবে না’। বর্তমান আওয়ামী রাজনীতির জোয়ারের পরতে পরতে প্রচ্ছন্ন ভাটার টান স্পষ্ট। এর উপরেই আস্থা মানে ফুটো নৌকায় নদী পার। সাবধান! খুব সহজেই সাবধান কথাটা বলা গেলো। আসলে বিষয়টা খুব কি সহজ? তবে হলে ভালো হয়। যদিও তেমন কোন নজির পরিলক্ষিত হচ্ছে না কোথাও।

আসলে মাঝে মাঝে আমাদের এমন কিছু বিষয়ের মুখোমুখি হয়ে যেতে হয়, তখন মনে হয় আরে কাকে সাবধান হতে বলি? এখনতো সাবধানেরই সাবধান হওয়ার সময়। তা না হলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কেমন করে বলেন এমন সব কথা? যে নাম আমাদের আবেগতাড়িত করে। যার একটি লেখা ছাপা হয়েছে শুনলে খুঁজে পড়তে বাধ্য হই। বাংলদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক জীবন্ত কিংবদন্তী, বীরউত্তম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। আর কে আছে এ দেশে এমন খেতাবে ভূষিত? একজন মানুষের এক জীবনে আর কি চাই? আর কার আছে এমন প্রাপ্তি? তবু কোথায় যেন দূরত্ব! এ দেশে সুযোগ বুঝে রাজাকারের গাড়িতেও পতাকা উড়ালো, কিন্তু বঙ্গবীরের ভাগ্যে সেটা জুটলো না! কোথায় যেন দূরত্ব! কতবার আমাদের কর্মক্ষেত্রগুলিতে আলোচনায় এসেছে তার নাম, না রাখা যায়নি। কোথায় যেন দূরত্ব! বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভায় বসেও দেখেছি। তার নাম নিয়ে কথা উঠলেও অগ্রজরা কোন না কোনভাবে বলেছেন, এখন থাক পরে ভেবে দেখবো। অথচ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তির যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা, এর কোন আলোচনাটা তাকে বাদ দিয়ে সম্ভব এবং সঙ্গত?

পঁচাত্তরে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে, প্রকাশ্যে যারা স্তব্ধ সেই বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রতিবাদ করেছিলো। তিনি কি তাদের অন্যতম নন? তবু কোথায় যেন দূরত্ব! কেনই যেন প্রকাশ হচ্ছে না তাকে অপছন্দের কারণ। ইতোমধ্যেই দেশ উদ্যাপন করেছে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর, আর জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে। পনেরো আগস্ট বাঙালির চরম দুঃখের দিনে যারা জন্মদিনের উৎসব পালন করতো। তারাও বাধ্য হয়ে জন্মের ক্ষণ স্থানান্তরিত করেছে। যুদ্ধাপরাধীরাও একেবারে নিশ্চিহ্ন না হলেও এখন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে গেছে। এখন আর পায়ে ভর দিয়ে তারা কেউই দাঁড়িয়ে নেই। তবু যেন সবাই মিলে এক এবং অভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের মানুষ হতেই পারছি না। সমস্বরে বলাই যাচ্ছে না ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। একটা দূরত্ব যেন থেকেই যাচ্ছে। দারুণ প্রশ্ন মনে। কোথায়, কেন, কার জন্যে এই বিভাজিত পথ চলা?

আমাদের চার পাশের সুপরিচিত খুব পছন্দের মানুষদের অভিব্যক্তিও সুন্দর থাকছে না,  রাখতে পারছি না। স্বার্থ তাকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিয়েছে। এই তো সেদিন, হঠাৎ-ই বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যাক্রান্ত হলো সমগ্র সিলেটসহ দেশের অনেক অঞ্চল। আকস্মিক এই অপ্রস্তুত পরিস্থিতি অতিক্রমকল্পে রাষ্ট্র খুব দ্রুতই সশস্র বাহিনীকে দায়িত্ব প্রদান করলো, সার্বিক ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের। ঠিক সেই সময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশ প্রতিদিনে তার একটি লেখার মধ্যে লিখলেন ‘বাংলাদেশ সেনা বাহিনী ভারতের সাথে পারে না। বার্মার সাথে পারেন া। তবে ত্রাণ বিতরণটা নিশ্চয়ই ঠিকঠাক করতে পারবে’। আরো লিখলেন, ‘দেশ যখন বন্যায় ভাসছে তখন পদ্মা সেতুর এমন আড়ম্বরপূর্ণ উদ্বোধন না করে টাকাটা ত্রাণ কাজে ব্যবহার করলে আল্লাহ্ খুশি হবেন।’ এই লেখা দুটি পড়বার পরে দারুণ নীরবে কঠিন লজ্জিত হলাম। মূহূর্তেই ভাবতে বাধ্য হলাম। আমার পরম ভলোলাগার মানুষ, অহংকার করবার মানুষ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে  রণাঙ্গনে যুদ্ধ জয় করে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে, যিনি তার অস্ত্র সঁপে দিয়েছিলেন জাতির পিতার পায়ের কাছে। সেই বীর উত্তম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আর গলায় গামছা জড়ানো রাজনীতিবিদ কাদের সিদ্দিকী এক জিনিস নয়।

ধীরে ধীরে বুঝতে বাধ্য হলাম অগ্রজরা কেন এড়িয়ে চলেন তাকে। বুঝতে সহজ হলো কিভাবে তিনি দিগন্ত টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থাপক সেজেছিলেন? বুঝতে আরো সহজ হলো, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যাবধানে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এতো সমালোচনা করেও। উদ্বোধনের দিনে ঠিকই প্রথম সারিতে বসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হলেন। এর-ই নাম রাজনীতি। আমরা বুঝতে পারি না, তাই প্রশ্ন করি। কেন হলো, কি করে হলো, কিভাবে পারলো, এখানে কার দোষ? আমরা বেকুব তাই দোষ খুঁজে মরি, আর দোষীর পাশে বসে মাস্তি মারি। আমাদের চরিত্রের এই গুণের উন্মেষ সার্বজনীনত্ব লাভ করেছে। এখন এই সুবিধাবাদী চরিত্রের বিনাশ ঘটাবে কে?

একটা সময় ছিলো মানুষ বলতো ‘টাকা হারিয়েছো? অপেক্ষা করো সে ফিরবে। চরিত্র হারিয়েছো? বিশ্বাস করো আর ফিরবে না।’ সমসাময়িক সময়  বিষয়টাকে একেবারে উল্টে দিতে চাইছে বা দিয়েছে। সময় পারে অনেক কিছুই পাল্টে দিতে। আমরা ভাবতেও পারি না। সময়ের অনেক প্রশ্নের উত্তর জানলেও বলাটা মুশকিল হয়ে পরে। কারণ যিনি শুনবেন তারওতো যোগ্যতার একটা মাপকাঠি থাকা চাই? 

একটা প্রচলিত গল্প যার সঙ্গে সত্যের কোন যোগ নেই। ‘এক দেশের এক ছেলে, সে দেশের পুলিশ বাহীনিতে যোগ দিতে সকল পরীক্ষায় সফল হয়ে সর্বশেষ ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত। উর্ধতন কর্তার প্রথম প্রশ্ন ‘বলো বিলসীর চরিত্র কেমন ছিলো? ঠিক সেই মুহূর্তে এক সেপাই এসে বললো, স্যার আপনাকে বড় স্যার ডাকছে। সে, যাচ্ছি বলে চলে গেলো। ফিরে এসে দেখছে ছেলেটি মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে। ‘বিশ্বাস করেন স্যার, বিলাসীর চরিত্র খুব ভালো ছিলো।’ এবার পুলিশ কর্তা সিপাইকে জিজ্ঞাস করলো এই কি হয়েছেরে? স্যার আমি আপনার প্রশ্ন শুনেই বুঝেছিলাম বিলসীর সঙ্গে এ শালার একটা লডরপডর আছে। প্রথমে মুখ খুলতে চায়নি শালা। আমি অরে যত জিগাই, বল বিলাসী ক্যাডা, বাড়ী কই? খালি উল্ডাসিদা কয়। একবার কয় শরৎচন্দ্র, আবার কয় মালপাড়া, কয় ও সাপুড়ে কন্যা। এরপর দিছি হালারে বাঁশডলা। এইবার দেখবেন স্যার, হালার মুখদিয়া সুরসুর কইরা বাইরাইবে বিলাসী কেডা। হ্যার লগে অর লডরপডর কতদিনের।

বোধ করি কারো চরিত্র বিন্যাসের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির বাস্তব রূপ যা এই গল্পকেও হার মানায়, নিশ্চয়ই আমরা সেটা চাইবো না। তবু বিশ্বাসে যেন থাকে চরিত্রে স্খলন পরিশুদ্ধ হবার নয়। মনে যেন থাকে যাদের হাতে রক্তাক্ত হলো ১৫ আগস্ট ৭৫, যে যে কারণে যে যে প্রত্যাশা পুরণের অভিপ্রায়ে। ২০০৪ এর ২১ আগস্টের হত্যাযজ্ঞও ঠিক একই কারণে একই অভিপ্রায়ে। ভিন্নতা শুধু সম্পৃক্ত কিছু বিষাক্ত মানুষ আর সময়ের। ভুলে যেন না যাই চরিত্রের স্খলন পরিশুদ্ধ হবার নয়। যদিও অনেক কিছুরই স্খলন ঘটেছে সময়ের সাথে সাথে। দেশের মানুষের বাহ্যিক রূপকল্পের ঔজ্জ¦ল্যে বৃদ্ধি পেয়েছে সন্দেহ নাই। যার অনেক কিছুই যায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে।  একই সঙ্গে বীভৎসভাবে তারা হারিয়েছে তাদের অধিকার অন্ধকারে। সময়ও এসে গেছে ফের মানুষের দুয়ারে দাঁড়াবার। দিতে হবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। যারা শরৎ সহিত্য পড়ে নাই, যারা জানে না বিলাসীর চরিত্রের মহিমান্বিত রুপ। যারা বুঝতে পারে না বিলসী কেমন করে সমাজের দুষ্ট দৃষ্টি আর অচলায়তন ভেঙ্গে, নীরবে কি বিনম্র দৃপ্ততায় মৃত্যুঞ্জয়কে বাঁচিয়ে তুলেছিলো। তারা কখনো প্রশ্ন করবার সুযোগ পেয়ে গেলেও যেন এমন প্রশ্ন করতে না পারে- ‘ বিলাসীর চরিত্র কেমন ছিলো?’

লেখক: আজমল হোসেন লাবু, বাচিক শিল্পী ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য।