বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের সরকারি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবি করেছে উদীচী
সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্ত’র নামে করার সরকারি প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ। একই সঙ্গে উদীচী বরিশালে অশি^নী কুমারের নামে নামকরণের লক্ষ্যে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনের সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
বৃহষ্পতিবার বিকেলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উদীচী ওই দাবি জানায়।
উদীচীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের তথা বরিশালের কৃতি সন্তান মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্ত। তাঁর নামে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণের দাবিতে কয়েক যুগ ধরে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করে আসছে। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করে গেজেট নোটিফিকেশন জারি হওয়াটা এখন সময়ের দাবি। এটা বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির স্বীকৃতিও বটে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী শুরু থেকেই ্এই আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। বর্তমানেও সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে অশি^নী কুমারের নামের করার যে সরকারি প্রস্তাবনা তার পক্ষে অবস্থান করছে। উদীচী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানায় এবং অবিলম্বে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানায়।
মহাত্মার বাসভবনে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বরিশালের অসাম্প্রদায়িক নাগরিকগণ কলেজটির নামকরণ ‘মহাত্মা অশি^নী কুমার কলেজ’ করার দাবি জানালেও তৎকালীন কতিপয় মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক নেতারা সেই দাবি অগ্রাহ্য করেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট একই দাবি করা করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এমন তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
বরিশালের প্রগতিশীল ও সর্বস্তরের সচেতন মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ অশি^নী কুমারের নামে করার সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের বিবেচনাধীন থাকায় আমাদের আশান্বিত করেছে। আবার আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি মহল মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণের বিরোধীতার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। আমরা এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশি^নী কুমারের নামে করার সরকারি প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করি।
উল্লেখ্য, বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন অশি^নী কুমার। আর তার এই চিন্তার ফসল হিসাবে নিজের অর্থব্যয়ে বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোডে জমি কিনে প্রথমে ১৮৮৪ সনে তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন বিদ্যালয়’। পরবর্তিতে তিনি দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নিজ অর্থে ১৮৮৯ সনে তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন কলেজ। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার জন্য নিজ অর্থে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন মেডিকেল স্কুল। সর্বত্যাগী নিঃসন্তান এই মহামানব কলকাতায় চিকিৎসা গ্রহণকালে ১৯২৩ সনে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
পাকিস্তান সরকারের আমলে মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের বাসভবনটি সরকার রিকিউজিশন করে এবং তিনি সর্বদা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ^াসী ছিলেন বলে তার বাসভবনে ব্রজমোহন কলেজের কসমোপলিটান ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৬ সনে তার বাসভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বরিশাল নৈশ মহাবিদ্যালয়’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নৈশ কলেজটিকে প্রথমে বরিশাল দিবা ও নৈশ কলেজে রূপান্তর করা হয়। পরে এটির নামাকরণ করা হয় ‘বরিশাল কলেজ’। এরশাদ সরকারের আমলে কলেজটিকে ১৯৮৬ সনে জাতীয়করণ করা হলে কলেজটির নামাকরণ করা হয় ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’। ১৯৯২ সনে মহাত্মার ঐতিহাসিক বাসভবনটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়।