বরিশাল-ঢাকা নৌপথে দেড় বছরে ৪ খুন

বরিশাল-ঢাকা নৌপথে দেড় বছরে ৪ খুন

বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহি লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই। বিলাসিতায় লঞ্চগুলো দেশ সেরা হলেও এগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই ঠুনকো। একেকটি লঞ্চে ২ থেকে ৩ জন নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও তারা যাত্রীদের নিরাপত্তার চেয়ে মালিকের এবং নিজের স্বার্থ রক্ষায় স্বোচ্চার। এই সুযোগে লঞ্চগুলোতে নির্বিঘেœ হত্যা সহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে একের পর এক। এ অবস্থায় যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। 

২০১৯ সালের জুলাই থেকে গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চে ৪ জন খুন হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের লস্কর কেবিনে শারমিন আক্তার নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বরিশাল আসা এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের ৩৯১ নং কেবিনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক নারীকে। এর ২ মাস পর ১৭ নভেম্বর একই রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের ছাদে শামীম হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই একই রুটের ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী-৮ লঞ্চের কর্মচারী কেবিনে শ্বাসরোধ করে আখী আক্তার নামে এক গৃহবধূকে এবং ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট এমভি পারাবাত-১০ লঞ্চের কর্মচারী কেবিনে মোহসিনা আক্তার মিনা নামে আরও এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। 

হালিম হাওলাদার নামে এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, বিলাসবহুল লঞ্চের কেবিনগুলো হত্যাকান্ডের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। আধুনিকতা এবং বিলাসিতায় লঞ্চগুলো দেশ সেরা হলেও যাত্রীদের জান-মালের নিরাপত্তা একেবারেই উপেক্ষিত। এসব লঞ্চের কেবিনে নানা অপকর্ম হলেও দেখার কেউ নেই। 

যাত্রীরা জানান, প্রতিটি লঞ্চে মালিকের নিয়োজিত ২-৩ জন নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে। তারা ঘাটে যাত্রী ওঠানামা দেখভাল এবং কেবিন কালোবাজারী ও লঞ্চের ডেকের জায়গা বেঁচাবিক্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ কারনে যাত্রীদের জানমাল থাকে অরক্ষিত। 

সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে প্রতি বছর প্রায় এককোটি যাত্রী যাতায়াত করে। ইতিপূর্বে এই রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১০ জন করে আনসার সদস্য রাখা হতো। কিন্তু সশস্ত্র আনসার রাখতে লঞ্চে অস্ত্রাগারের জায়গা এবং তাদের বেতন-ভাতা প্রদানে একটি বড় অংক ব্যয় হয় বলে লোকসানের অজুহাতে ২০০৬ সাল থেকে লঞ্চগুলো থেকে সশস্ত্র আনসার নামিয়ে তাদের জায়গায় ২ থেকে ৩ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনের চেয়ে টিকেট কালোবাজারী সহ নানা ধান্ধায় ব্যস্ত। প্রতিটি লঞ্চের সুপারভাইজার, মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানী থেকে লস্কর পর্যন্ত সবাই রাতে তাদের থাকার স্থান যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। যদিও বেতন কম হওয়ায় তারা তাদের রাতের থাকার জায়গা ভাড়া দেন বলে দাবী তাদের। 

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুরভী লঞ্চ কোম্পানীর পরিচালক রিয়াজুল কবির বলেন, লঞ্চে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথেস্ট সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। তারা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা আত্মিয়-স্বজন পরিচয়ে থাকতে দেয়। কিন্তু অন্তরালে তারা লঞ্চে তাদের কেবিন ভাড়া দেয়। 

বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো ভয়াবহ নিরাপত্তাহীন বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবিব। তিনি বলেন, লঞ্চগুলোতে ৩ জন নিরাপত্তারক্ষীর কথা বলা হলেও পালাক্রমে পাহাড়া দেয় নামমাত্র ১জন। লঞ্চের হাজারো যাত্রীর জন্য এমন ঠুনকো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিরাপত্তার নামে প্রহসন হিসেবে দেখছে নৌ পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন মহলে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি। 

বরিশাল-ঢাকা নৌপথে পালাক্রমে চলাচল করে ৩০টি বিলাসবহুল লঞ্চ। যাত্রী নিরাপত্তার এমন ঠুনকো নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসনকে। লঞ্চ মালিকদের সাথে বৈঠক করে যাত্রীদের নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।