বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া খাল অস্তিত্ব সংকটে

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া খাল অস্তিত্ব সংকটে

বেলা’র আয়োজনে লাকুটিয়া খাল বিষয়ক উপকারভোগী সমন্বয় সভায়  বক্তারা বলেন বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া খাল অস্তিত্ব সংকটে ।

সোমবার ২৩ মে  বিকাল ৩ টা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরিশালের আয়োজনে ‘‘লাকুটিয়া খাল বিষয়ক উপকারভোগী সমন্বয় সভা’’বরিশালে  সদর রোডে বিডিএস মিলনায়তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপিকা শিবানী চেীধুরীর সভাপতিত্বে সভার শুরুতে বেলা বরিশাল অফিসের সমন্বয়কারী জনাব লিংকন বায়েন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘সমাজের একশ্রেনীর স্বার্থান্বেষী মহালের দখলদারিত্ব ও পরিবেশ পরিপন্থী কর্মকান্ডের কারনে ধান-নদী-খাল বেষ্টিত বরিশাল অঞ্চলের পরিবেশ আজ হুমকীর সন্মুখীন। দীর্ঘদিন ধরে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া খালটি দখল-দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল। যে কারনে বেলা দখলদার উচ্ছেদে ও এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে উচ্চ আদালতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। মামলা পরবর্তী সময়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে, তৃনমূল পর্যায়ের মানুষের মতামত ও এ অবস্থায় বেলা’র করনীয় বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহনের লক্ষ্যে মূলতঃ এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে লাকুটিয়া খালটিতে যে দখলদারিত্ব চলছিল তা এখন আগের মতো না থাকলেও সিটিকর্পোরেশনের ৩ কিলোমিটার অংশে দখলদার এখনও রয়েছে। চলছে খাল দূষণ। কেউবা দোকানঘর উঠিয়ে খাল ভরাট করছে। আবার অনেকে বাড়ীর অংশ বর্ধিত করে খালের জমিতে ঘর করছে। এ অংশে পানি দূষণের মাত্রা প্রকট রূপ ধারন করেছে। যে কারনে মানুষ নিত্যব্যবহার্য কাজে এ খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। খালটিতে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। খালটিতে কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকায় ও অপরিকল্পিত কালভাটের কারনে নৌযোগাযোগ দীর্ঘসময় যাবত একেবারেই বন্ধ রয়েছে। তাই উপস্থিত স্থানীয় জনতা বেলা’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ খালটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানিয়েছেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ  আবদুল মালেক মিয়া। তিনি বলেন, ‘‘উন্নত পরিবেশ উন্নত জাতির পরিচয় বহন করে। রাস্তাঘাট করে দিলেই মানুষ চলতে পারবে এ ধারনা হতে অধিক রাস্তাঘাট নির্মান করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ বৃদ্ধির সাথে সাথে যে মানুষের প্রয়োজনে জলাধার বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করতে হবে সেদিকে আমরা খেয়াল করিনি। যেটুকু জলাধার এখনও রয়েছে তা সংরক্ষণ করতে পারলেও পরিবেশ ভাল থাকবে এবং জীব বৈচিত্রও রক্ষা পাবে। এলাকার জনগণই এলাকার খালকে দখল দূষণ করছে আবার তারাই সেই সমস্যায় ভূক্তভোগী। তাই খাল রক্ষায় কাউকে না কাউকে উদ্যোগ গ্রহণ করে ভূমিকা রাখতে হবে।

সভাপতি অধ্যাপিকা শিবানী চৌধুরী বলেন, কৃষি, মৎস্য, নৌ-যোগাযোগ এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ও এলাকার সার্বিক উন্নয়নে দখল দূষনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলের কাজ করতে হবে। মানুষের আবাসন বৃদ্ধির কারনে জমি ও জলাধারসমূহ হারিয়ে যাচ্ছে। জলাধার দখল-দূষণ ও হারিয়ে যাবার কারনে মানুষের কৃষি, যাতায়াতসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এমনকি ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ বাড়ছে। যেখানে সেখানে যত্রতত্র ভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এ সকল বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে নজরদারিতে এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  পুকুর, নদী খাল খনন এখন সময়ের দাবী। লাকুটিয়া খালকে রক্ষায় সম্মিলিতভাবে দাবী উত্থাপন করতে হবে। আমার যারা সুখী সম্দ্ধৃ বাংলাদেশে স্বপ্ন দেখি তাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সুষ্ঠু পরিবেশ সংরক্ষনে ও নদী খালের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।