বাবুগঞ্জে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে ৩ গ্রামের মানচিত্র

আগ্রাসী হয়ে উঠেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। অসময়ে নদের ভাঙনে বাবুগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে রহমতপুর ইউনিয়নের লোহালিয়া, সিংহেরকাঠী এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী গ্রাম। নদের ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়াতে অসহায় হয়ে পরেছে তীরবর্তী এলাকার বসবাসরত পরিবারগুলো। ভাঙন আতঙ্কে কাটছে তাদের প্রতিটি রাত, কখন ভাঙন আঘাত হানে।
উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের লোহালিয়া, সিংহেরকাঠী এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী গ্রামের পূর্ব ও উত্তরাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভাঙছে ওই এলাকাগুলো। ভাঙনের ছোবলে পড়েছে চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজি কালিকাপুর ও ভবানিপুর গ্রামসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানি কমার সাথে সাথে এসব এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
রহমতপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ছোট মীরগঞ্জ বাজার গত বছর নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এবছর বাজারটি আবার ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জোয়ারের পানি উঠা নামা এবং নদীর স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক সপ্তাহ যাবৎ প্রবল ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে ছোট মীরগঞ্জ বাজারটি আবারো ঝুঁকিতে পরেছে। এসব এলাকার লোকজন এখন আর ত্রান চাননা। তারা ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান।
রবিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিংহেরকাঠি গ্রামের নদী তীরের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। গত ৪ দিনের ভাঙনে কয়েকটি দোকান, ৭/৮টি বসতঘর ও কয়েক একর আবাদি জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। ঝুকিতে রয়েছে ২৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পানের বরজ, ফসলি জমি ও বসত ভিটা।
ছোট মীরগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রফিয়াদি গ্রামের শামীম জানান, নদী ভাঙনের কারণে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চার বার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। এবার ভাঙনের কবলে পরায় দোকানটি অনত্র সরিয়ে নিয়েছেন। গ্রামবাসী অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নদী ভাঙনে ৭ বার ক্ষতিগ্রস্ত শিপন ঘরামী বলেন, বিগত দিনে ৭ বার নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারিয়েছি। এবার আাবার ভাঙনের কবলে পড়েছি। এছাড়া গত ৪ দিনে এই এলাকার কয়েকটি পরিবার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ ২কেজি চাল দিয়ে সাহায্য করেনি। আমাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। আমরা সরকারি সাহায্য চাই না, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই।
রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী এলাকার ইউপি সদস্য জামাল হোসেন পুতুল বলেন, প্রতিবছরই নদী ভাঙনে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকি। ২০২০ সালে ছোট মীরগঞ্জ বাজার সম্পূর্ণটা ভেঙে গেলে বাজারটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর পার না হতেই আবার বাজারটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতিমধ্যে বাজারটির ৪ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স-মিল, মসজিদ, বসতঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই এলাকার বেরিবাদ টি ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতে প্রায় ৩ শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা কোন খোঁজ নেয়নি।
চাঁদপাশা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের রফিয়াদি গ্রামসহ ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার ইতিমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চাঁদপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের মানচিত্র হুমকির মুখে পড়বে।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ-জামান মিলন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মুশফিকুর রহমান বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ চেয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ শামিম স্যারের বরাবর একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত ওই এলাকার ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।