মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের নাম অক্ষুন্ন রাখতে হবে

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শিক্ষানুরাগী দানবীর আধুনিক বরিশালের রূপকার মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের আজ ১৬৮তম জন্মদিন। জন্মদিনে তার প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা। আজকের এই দিনে তাঁর বসতভিটায় নির্মিত কলেজ প্রাঙ্গনে দুই দিনের মেলার আয়োজন করেছে অশি^নী কুমার সাংস্কৃতিক সংসদ। তাদের প্রতি আমদের কৃতজ্ঞতা। দুই দিনের মেলায় বিশিষ্ট নাগরিকরা থাকবেন। তাঁর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা হবে। অশি^নী কুমারের জীবনাদর্শ নিয়ে লম্বা বক্তৃতাও হবে। তারা বলবেন তাঁর নাম অক্ষুন্ন রাখতে হবে। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে বক্তারা নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবীত করবেন। আমাদের প্রত্যাশা অশি^নী দত্তের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মেলা থেকেই যেন ঘোষণা আসে তাঁর বসভিটায় প্রতিষ্ঠিত কলেজের নাম তাঁর নামেই করা হবে। যমি এমনটা হয় তাহেল বরিশালবাসী কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হবে।
আমরা জানি, এই গুণি মানুষের বসতভিটায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম অশি^নী কুমারের নামে করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন এবং দাবি তোলা হচ্ছে। দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক স্মরকলিপিও দেওয়া হয়। অশি^নী কুমার দত্তের বাসভবনে পরিচালিত সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্ত’র নামে করার সরকারি প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। কিন্তু কেন জানি না সেই দাবি কার্যকরে উদ্যোগ নিয়েও থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জানতে চাই, সরকারি প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন?
বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন অশি^নী কুমার দত্ত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল অশি^নী দত্তের বাসভবন। পশ্চাদৎপদ জনপদে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি নিজের অর্থব্যয়ে বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোডে প্রথমে ১৮৮৪ সনে তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন বিদ্যালয়’। পরবর্তিতে তিনি দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নিজ অর্থে ১৮৮৯ সনে তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন কলেজ। এই মহাবিদ্যালয়টিকে এক সময়ে ‘অক্সফোর্ড অফ বেঙ্গল’ নামে বৃটিশ সরকার অভিহিত করতো। এই মহাবিদ্যালয়ে নিজে বিনা বেতনে শিক্ষকতাও করেছেন অশি^নী কুমার। ১৯২৩ সালে কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সেই থেকে কালীবাড়ি রোডে অবস্থিত তাঁর নিজস্ব বাসভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে।
পাকিস্তান সরকারের আমলে মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের বাসভবনটি সরকার রিকিউজিশন করে এবং তিনি সর্বদা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ^াসী ছিলেন বলে তার বাসভবনে ব্রজমোহন কলেজের কসমোপলিটান ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৬ সনে তার বাসভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বরিশাল নৈশ মহাবিদ্যালয়’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নৈশ কলেজটিকে প্রথমে বরিশাল দিবা ও নৈশ কলেজে রূপান্তর করা হয়। পরে এটির নামাকরণ করা হয় ‘বরিশাল কলেজ’। কলেজটিকে ১৯৮৬ সনে জাতীয়করণ করা হলে কলেজটির নামাকরণ করা হয় ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’। ১৯৯০ সনে মহাত্মার ঐতিহাসিক বাসভবনটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়।
এখানে একটা বিষয় বলা প্রাসঙ্গিক। অবিভক্ত ভারতে দুইজন মহাত্মর জন্ম হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মহাত্মা গান্ধি আর অপরজন হচ্ছেন আমাদের বরিশালের মহাত্মা অশি^নী কুমার। তিনি তো আমাদের বরিশালকেই বিশে^ মর্যাদার আসনে আসীন করে গেছেন। তাই বলবো, বরিশালের সঙ্গে অশি^নীর নাম যুক্ত হলে আমরা সমৃদ্ধই হবো। বিষয়টি নিয়ে যেন কেউ অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার সুযোগ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখি। কোনভাবেই যেন আমাদের সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা না হয়। সেব্যাপারে, রাজনৈতিক দল, নেতাকর্মী, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের দায়িত্ব নিতে হবে।
বর্তমান সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালেরর হারানো ঐহিত্য রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে একাত্তরের পাক বাহিনীর টর্চার সেল সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। সংস্কার ও সংরক্ষণ করেছেন অশি^নী কুমার হল। সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।তাঁর হাত ধরেই সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্ম অশি^নী কুমার দত্তের নামে হবে এমন বিশ^াস আমাদের আছে। তিনি এই উদ্যোগটিও নিবেন এই প্রত্যাশা করি। এই নগরে আমরা যারা বাস করছি তারা সবাই কোন না কোনভাবে একজন অন্যজনের সহযোগী। সবার সহযোগিতা নিয়েই এই সুন্দর কাজটি হোক। আবারও মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা।