মেয়াদোত্তীর্ণ বরিশাল জেলা-মহানগর ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি

মেয়াদোত্তীর্ণ বরিশাল জেলা-মহানগর ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি

কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের সুপার ফাইভ কমিটি। অধিনস্থ ইউনিট কমিটিগুলো হালনাগাদ করে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জেলা ও মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকলেও গত ২ বছরেও কিছুই করতে পারেনি তারা। 

কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এখন অধিনস্থ ইউনিট কমিটিগুলো হালনাগাদের তোড়জোড় শুরু করেছে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতারা। এ লক্ষ্যে উপজেলা, ওয়ার্ড ও কলেজ কমিটির সম্ভাব্য নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা তাদের নিজ নিজ অনুসারীদের ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করায় বিপাকে পড়েছেন জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের  মেয়াদোত্তীর্ণ নেতারা। শত চাপ উপেক্ষা করে চলতি মাসের মধ্যেই ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের কাঁধে অধিনস্থ ইউনিট কমিটির দায়িত্ব তুলে দেয়ার কথা বলেন তারা। 

মাহফুজুল আলম মিঠুকে সভাপতি, তারেক-আল ইমরানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, কামরুল আহসানকে সাধারণ সম্পাদক, তৌফিকুল ইসলাম ইমরানকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং সোহেল রাড়িকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট জেলা ছাত্রদলের সুপারফাইভ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রিয় কমিটি। একই দিন রেজাউল করিম রনিকে সভাপতি, তরিকুল ইসলাম তারেককে সিনিয়র সহসভাপতি, হুমায়ুন কবিরকে সাধারণ সম্পাদক, মাহমুদুল হাসান তানজিলকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং এনামুল হাসান তসলিমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মহানগরীর সুপারফাইভ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। দু'টি কমিটিকে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অধিনস্থ ইউনিট কমিটিগুলো হালনাগাদ করে স্ব-স্ব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। দু'টি কমিটির মেয়াদ ছিল ২ বছর। 
গত ১৮ আগস্ট জেলা ও মহানগর কমিটির ২ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের অধিনস্থ ইউনিট কমিটিগুলো হালনাগাদ করে স্ব-স্ব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়েছে। 

জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের অধিনে ১০ উপজেলা, ৬ পৌরসভা এবং ২৪টি কলেজ কমিটি রয়েছে। গত ২ বছরে একটি ইউনিট কমিটিও হালনাগাদ করতে পারেনি তারা। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটির মাত্র ৪টি সম্পন্ন করতে পেরেছে মহানগর। বাকী ২৬টি ওয়ার্ড কমিটির কাজেই হাত দিতে পারেনি তারা। একইভাবে মহানগরের অধিন ৪টি থানা এবং ৬টি কলেজ কমিটিও সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। 

তবে গত পহেলা আগস্ট বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতারাও নড়েচড়ে বসেছেন। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ইউনিট কমিটির সম্ভাব্য নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন জেলা ও মহানগরীর নেতারা। কমিটি গঠনের খবরে করোনাকালেও চাঙ্গা হয়েছে ছাত্রদল। তারা বিভিন্নভাবে তদবির-লবিং করছেন প্রত্যাশিত পদ পেতে। আবার শীর্ষ নেতারাও তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে স্থান পাইয়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন জেলা ও মহানগর নেতাদের উপর। 

বিভিন্ন উপজেলা ও ওয়ার্ড ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতারা জানান, ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়ার প্রধান দুটি শর্ত হচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে এসএসসি ব্যাচ এবং অবিবাহিত। অর্থাৎ ২০০৫ সালের আগের এসএসসি ব্যাচের এবং বিবাহিতরা ছাত্রদলের উপজেলা, ওয়ার্ড ও কলেজ কমিটিতে স্থান পাবে না। কিন্তু হিজলা উপজেলা ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী মহসিন সিকদার বিবাহিত এবং ২০০৪ সালের এসএসসি ব্যাচের হয়েও ২০০৫ সালে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে বিভিন্ন উপজেলা, ওয়ার্ড ও কলেজ কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা নানাভাবে জাল-জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু বলেন, বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা ইতিপূর্বে ছাত্রদলের বিভাগীয় টিমের কাছে ভাইভা দিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে ৫টি, ৬টি পৌরসভার মধ্যে ৩টি এবং ২৪টি কলেজ কমিটির মধ্যে ১০টি কমিটি প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছেন। এখন পদ প্রত্যাশীরা তথ্য ফরম পূরণ করবে। বিভাগীয় টিমের নেতারা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সন্তুষ্ট হলেই সম্ভাব্য কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। 

মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির জানান, যারা যোগ্য এবং ত্যাগী, যারা বিরোধী দলে থেকে রাজনীতি এগিয়ে নিতে পারবে, যারা মাঠে সক্রিয় তাদের কাঁধেই বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং কলেজ ছাত্রদলের কমিটির দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে। কেন্দ্র থেকে দুই দফা ছাত্রদলের কার্যক্রম স্থগিত করা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের কারামুক্তির আন্দোলন এবং করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে ছাত্রদলের ইউনিট কমিটি সম্পন্ন করে জেলা ও মহানগরের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি বলে জানান জেলার সভাপতি ও মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক।