রাজপথের আতঙ্ক মোটরসাইকেল

রাজপথের আতঙ্ক মোটরসাইকেল

‘মোটরসাইকেল’ মানেই বেপরোয়া। রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কে-মহাসড়কে বেপরোয়া এ দুই চাকার যান নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। মোটরসাইকেলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও নিয়ম না মানা, এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পথচারীদের।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এর নিয়ন্ত্রণও জরুরি। রাজধানীতে নিয়মমতো সব গাড়িই দাঁড়ায় সিগন্যালে। শুধু নিয়ম নেই যেন মোটরসাইকেলের। কখনো এগিয়ে চলে একেবেঁকে ফুটপাতে পথচারীদের ঝুঁকিতে ফেলে। কখনো উল্টো পথে, কখনো নিষিদ্ধ বাঁকে মোড় নিয়ে, কখনো আবার বিপজ্জনক গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। শুধু ফুটপাতই নয়, রাজপথেরও আতঙ্ক এই দুই চাকার যান।

দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৩৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৪৭ জনের।

রোববার সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে থেকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি মাসেই মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। আমাদের সংস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।’

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে দেশে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন মোট ৪৬৪ জন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়কে মোট নিহতের মধ্যে ৭৬ জন নারী এবং ৫১ জন শিশুও রয়েছে। ১৩৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৪ জন, অর্থাৎ ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

একই সময়ে পাঁচটি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। ১২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন। দুর্ঘটনায় বাস যাত্রী ১৮, ট্রাক যাত্রী ১৩, পিকআপ যাত্রী ১১, লরি যাত্রী সাত, ট্রাক্টর যাত্রী পাঁচ, মাইক্রোবাস যাত্রী ৯, প্রাইভেটকার যাত্রী সাত, সিএনজি যাত্রী ১২, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৬০, নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-বোরাক-টেম্পু যাত্রী ২৭, টমটম-ভ্যান যাত্রী ছয়, বাই-সাইকেল আরোহী পাঁচ, রিকশা-রিকশাভ্যান যাত্রী ৯ জন নিহত হয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহতদের মধ্যে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এক জন, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এক, পুলিশ সদস্য পাঁচ, সেনা সদস্য দুই, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৩, পল্লী চিকিৎসক তিন, ডাক পিওন এক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী এক, মানসিক প্রতিবন্ধী চার, স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক তিন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৮, পোশাক শ্রমিক ৯, ইটভাঙ্গা শ্রমিক তিন, ট্যাঙ্ক লরি শ্রমিক দুই, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৪২, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা আট এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৭৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৩১টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৩৮টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৯টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।


ভোরের আলো/ভিঅ/০৪/০১/২০২১