রামকৃষ্ণ মিশনের পুরোহিতের মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন

রামকৃষ্ণ মিশনের পুরোহিতের মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন

গত বুধবার বরিশাল নগরীর রামকৃষ্ণ মিশনের পুকুরে ডুবে পুরোহিত বিপ্রব্রত বসুর (৬০) মৃত্যু হয়েছে। ৯৯৯ এর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিলে দুইজন ডুবরী ওই পুকুর থেকে বিপ্রব্রত বসুর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই দিন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নগরীর আবহাওয়াও ছিলো খুব খারাপ। ঝড়হাওয়া সঙ্গে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি এবং অমাবস্যায় জোয়ারের জলে নগরীর প্রায় স্থান ছিলো পানিতে ভরপুর। বিপ্রব্রত বসু প্রায় ৪০ বছর ধরে রামকৃষ্ণ মিশনে বসবাস করে আসছিলেন এবং পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এদিকে বিপ্রব্রত বসুর মৃত্যুর সংবাদে নগীরর মানুষের মাঝে গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনার ঝড়। অপূর্ব চৌধুরী নামে একজন তার ফেসবুক পোস্টে লিখিছেন, পরিকল্পিত হত্যা, নাকি অন্য কিছু’। আবার কেউ অপ্রকাশ্যেও এমন আলোচনা করে যাচ্ছেন।

রামকৃষ্ণ মিশনের রন্ধনসালার কর্মী উষা রানী ভোরের আলোকে বলেন, ওইদিন মন্দিরের সকলেই বিশ্রামে ছিলো। বিপ্রব্রত বসুর বোন রাজ রানী প্রিয়া বসু পুকুরের পশ্চিম পাশে ছোট্ট একটি ঘরে থাকেন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন তাই রোজ দুপুরে বিপ্রব্রত বসু বোনকে খাবার দিতেন। 

প্রতিদিনের মত ওই দিনও খাবার দিয়ে নিজেও পুকুর পারে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। তখন তার বোনের একটি মগ পুকুরে পরে যাওয়ায় সেটা দাদাকে তুলে দিতে (বিপ্রব্রত বসুকে) আকুতি করেছিল। খাবার খাওয়ার পরে বিকেল ৫টার দিকে পুকুরের মধ্যে ভেসে যাওয়া মগ তুলতে গিয়ে বিপ্রব্রত বসু আর পুকুর থেকে উঠতে পারেননি। 

তিনি আরো বলেন, মন্দিরের পাশে ৫তলা ভবনের ছাদ থেকে একটি মেয়ে ঘটনাটা দেখে দৌড়ে মন্দিরে এসে সকলকে খবর দেন। ততোখনে বিপ্রব্রত বসু পুকুরের জলে ডুবে গেছেন। পরে ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিলে দুইজন ডুবরী এসে তার মৃত দেহ উদ্ধার করে।

বরিশাল রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী বিজিতাত্মানন্দজী মহারাজ বলেন, বিপ্রব্রত বসুর এই অকাল মৃত্যুতে আমরা সত্যিই শোকাহত। সবার অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। হৃদরোগ ও শ্বাসকস্টে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রায় সময় ‘ইনহিলার ব্যাবহার করতেন। জানি না আসলে পুকুরে পরে তার কি অবস্থা হয়েছিলো। সাঁতার জানতেন। কেন কূলে উঠতে পারলেন না, আমরা কেউই বলতে পারছি না। ওই সময় কি ঘটনা ঘটেছিল তার সঙ্গে।

স্বামী বিজিতাত্মানন্দ মহারাজ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমারা ঘটনা জানতে পেরে পুকুর পারে গিয়ে বিপ্রব্রত বসুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। দ্রুত ৯৯৯ জরুরি সেবায় কল করলে ফায়ার সার্ভিসের দুইজন ডুবুরীরা পুকুরে তল্লাসী করে বিপ্রব্রত বসুকে উদ্ধার করে। ততোখনে বিপ্রব্রত বসু আর বেঁচে নেই। এই মৃত্যু নিয়ে যারা ভুল মন্তব্য করছেন এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দয়াকরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কেউ গুজব সৃষ্টি করবেন না। সকলের কাছে অনুরোধ।

বরিশাল ফায়ার স্টেশন অফিসার  সৈয়দ সরাফত আলী জানান, ডুবুরি দল অনেক সময় খোঁজাখুজির পর পুকুরের মাঝখান থেকে পূজারীর লাশটি উদ্ধার করে। মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটানাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে বিপ্রব্রত বসুর মৃত দেহ ময়না তদন্ত করতে চায়। পরবর্তীতে মন্দির কতৃপক্ষ তার মৃত দেহ কাটাছেড়া না করার অনুরোধ জানায়। ঘটনাটি পুলিশ কমিশনারকে জানালে তাঁর অনুমতিক্রমে সৎকার করার অনুমতি দেয়া হয়। পরে বরিশাল মহাশ্বাশানে তার মৃতদেহ সৎকার হয়।