রোজিনার ন্যায় বিচার হবে: তথ্যমন্ত্রী

রোজিনার ন্যায় বিচার হবে: তথ্যমন্ত্রী

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামের বিষয়ে সাংবাদিকদের আবেগতাড়িতভাবে দেখা যাবে না। যেহেতু একটি মামলা হয়েছে তার যাতে সুবিচার হয়, তিনি যাতে ন্যায় বিচার পান, তার প্রতি কোনোভাবে যাতে অন্যায় না হয়; সেটি আমরা দেখছি। 

সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে খুবই আন্তরিক ও বদ্ধপরিকর।

গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) উদ্যোগে আয়োজিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে চট্টগ্রামের ৯০ জন সাংবাদিকের মাঝে দশ হাজার টাকা করে করোনাকালীন দ্বিতীয় পর্যায়ের চেক বিতরণ করেন।

রোজিনার ঘটনার বিষয়ে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পুলিশ হেফাজতে তার সম্মান যাতে রক্ষা হয় এবং কারা হেফাজতে তিনি যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পান, সেটি যাতে নিশ্চিত করা হবে বলে আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি যাতে ন্যায় বিচার পান সেটি অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারও কোন দায় থাকলে সেটিও বের হয়ে আসবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামকে নিয়ে কি ঘটনা ঘটেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, বাইরে প্রকাশ করা যাবে না এমন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়ে তার পকেটসহ অন্যান্য জায়গায় রেখেছিলেন এবং কিছু ছবি তুলেছিলেন। তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তিনি কাগজগুলো ফেরত দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সিইউজের সভাপতি সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ। সিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, বিএফইউজের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটু।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে তথ্য কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো তথ্য সরকারের কাছে চাইতে পারে। তথ্য কমিশনের মাধ্যমে শুধু সে তথ্যই তিনি পাবেন না যেটা নন-ডিসক্লোজার আইটেম।

তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে যেকোনো তথ্য পেতে হলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়, সে আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি মন্ত্রণালয়ে পাওয়া না যায় তাহলে তথ্য কমিশনে আবেদন করা যায়। ২০১৪ সালে তথ্য কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩১টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে দুটি শপথ গ্রহণ করেন। একটি হচ্ছে মন্ত্রী হিসেবে শপথ, অন্যটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ। সে শপথ আমাকেও নিতে হয়েছে। যেহেতু আমি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার শপথ গ্রহণ করেছি মন্ত্রিসভায় কোন কিছু আলোচনা হলে সেটি বাইরে বলতে পারি না। যেটি আমাকে বলতে বলা হবে শুধু সেটুকুই বলতে পারব।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি বা অন্য দেশের সাথে চুক্তি যেগুলো বাইরে প্রকাশ না করার কথা চুক্তিতে আছে বা সেই দেশের অনুরোধ আছে, সেগুলো কখনো বাইরে প্রকাশ করতে পারি না। সেটি সংরক্ষণ করা যেকোনো মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এখানে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়েছেন, সে জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে তিনি সেখানে পাঁচ ঘণ্টা আটক থাকলেন কেন? এটি নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখেননি, এক ঘণ্টা পরেই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। যে বিলম্বটা হয়েছে সেটি কেন হলো পুলিশ খুঁজে বের করবে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে, বিষয়টা তদন্তাধীন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে তাকে সেখানে কেউ হেনস্তা করেছিল কিনা। রোজিনা ইসলামের কি অপরাধ ছিল, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারও কোন অপরাধ আছে কিনা সেসবও বেরিয়ে আসবে। পুলিশও তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে তো অনেক খেলা আছে, আমাদের দেশ এত এগিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তান থেকে এগিয়ে গেল অনেক দূর। ভারতকেও অনেক ক্ষেত্রে পেছনে ফেলে দিল, সেটি তো অনেকের সহ্য হয় না। সেই কারণে দেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র আছে। সে জন্য একেক সময় একেক ইস্যু তৈরি করার অপচেষ্টা চালানো হয়।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনে শত শত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, প্রায় একশর কাছাকাছি শিশুকে হত্যা করা হলো সেটি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিবৃতিও দিল না। রোজিনা ইসলাম কেন পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে থাকলেন সেটি নিয়ে বিবৃতি দিয়ে দিল। আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন আছে যেগুলো ফিলিস্তিনে এত অন্যায় হচ্ছে সেটি নিয়ে বিবৃতি দেয়নি। এমনকি জাতিসংঘও কথা বলতে সাত দিন সময় নিয়েছে। কিন্তু রোজিনা ইসলামের বিষয় নিয়ে অনেকেই কথা বলেছে। সুতরাং সাংবাদিক বন্ধুদের অনুরোধ জানাব সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। এ ক্ষেত্রে সরকার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। কিন্তু কেউ অন্যায় করলে, নিয়ম-নীতির যদি কেউ তোয়াক্কা না করে সে ক্ষেত্রে যাতে সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে নিশ্চয় সাংবাদিক সমাজ একমত থাকবে।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটা ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার সাংবাদিক উপকৃত হয়েছে। কোন সাংবাদিক অসুস্থ হলে, চিকিৎসাধীন থাকলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পান,  মৃত্যুবরণ করলে এই  কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তিন লাখ টাকা তার পরিবার পায়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার সাংবাদিককে করোনাকালীন সহায়তা দেয়া হয়েছে। অভাবনীয়ভাবে এবার প্রধানমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন, যে জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।

সভায় সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে সরকার সাংবাদিকদের অনুদান দিয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্ট সব সময় সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করে থাকে।

তিনি বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে সচিবালয়ে যে অনভিপ্রেত ঘটনা হয়েছে। যা কোনোভাবে কাম্য নয়। তবে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখতে হবে। বিএনপি সরকার আমলেও অনেক সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়েছে, এসব নতুন না।