শেবাচিম হাসপাতালে পানি সমস্যার সমাধান যথাশিঘ্র হচ্ছে না

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পানি সমস্যার সমাধান শিঘ্র হচ্ছে না। ৬২ বছরের পুরনো টিউবওয়েল থেকে ময়লা ও লবনযুক্ত লাল রংয়ের ব্যবহার অযোগ্য পানি আসছে। ওই টিউবওয়েল সংস্কারের চেষ্টা চলছে ঢিমেতালে। তবে সংস্কার কাজে খুব একটা ফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আভাস দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। নতুন টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য গণপূর্ত বিভাগের কাছে কোন তহবিল নেই।
সমস্যা সমাধানে গত সোমবার নতুন টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ বরিশাল। বরাদ্দ পেয়ে নতুন টিউবওয়েল স্থাপনও সময় সাপেক্ষ। তাই যথাশিঘ্র পানি সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হাজার হাজার রোগী-স্বজন-ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীরা।
করোনাকাল শুরুর আগে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে দৈনিক গড়ে ২ হাজার রোগী ভর্তি থাকতো। করোনাকালে রোগী সংখ্যা কমলেও এখন আবার রোগী বাড়তে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার ৮২জন করোনা রোগীসহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলো ১ হাজার ১৯৬ জন রোগী। মঙ্গলবারও রোগী ভর্তি ছিলো ১ হাজার ২৮৬জন। যার মধ্যে করোনা রোগী ছিলো ৯৩জন।
রোগীর সেবা যতেœ প্রত্যেকের সঙ্গে থাকছেন এক থেকে দুই-তিন জন স্বজন। এছাড়া প্রতি শিফটে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীরও রয়েছে ৫ শতাধিক। অথচ রোগী, স্বজন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহারযোগ্য পানি সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
গত রোববার রাত থেকে পুরো হাসপাতালের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। গত সোমবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করা হলেও ফের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পানি সরবরাহ চালু করা হলেও টেপকল থেকে বের হচ্ছে ময়লা ও লবনযুক্ত লালচে ঘোলা পানি। ওই পানি ব্যবহার করতে পারছেন না রোগী-স্বজন-ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীরা।
রোগীরা জানান, টয়লেট-বাথরুমে পানি ব্যবহার করতে না পেরে অনেকেই বেকায়দায় পড়ছেন। এ কারনে টয়লেট-বাথরুম থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ওয়ার্ডগুলোতে। রোগীদের কাপড় ধোয়া নিয়েও সমস্যায় পড়েছেন তারা। ডাক্তার-নার্স কর্মচারীরাও একইভাবে পড়েছেন চরম বেকায়দায়।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালের অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। তারা নানা অজুহাত দেখায়। তারা কেন ব্যাকাপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা রাখেনি। কেন রোগীরা পোকা-ময়লা-লবনযুক্ত লালচে পানি ব্যবহার করবে। তারা কেন বরাদ্দ আনতে পারে না। হাসপাতালের পানি সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশ দেয়ার কথা বলেন তিনি।
গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম তালুকদার বলেন, হাসপাতাল চত্ত্বরের নার্সিং হোস্টেল ও ডাক্তার কোয়ার্টারে ১৯৬৮ সালে স্থাপিত দুটি টিউবওয়েল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে হাসপাতালের ওভারহেড ট্যাংকিতে রিজার্ভ করা হয়। পরে সেই পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়। একটি টিউবওয়েল থেকে লবনযুক্ত ঘোলাটে পানি আসছে। একটি টিউবওয়েলের পানিতে পুরো হাসপাতালের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে দুটি টিউবওয়েল থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, বেসরকারী কারিগররা বলেছে ওই টিউবওয়েল সচলের চেষ্টা করে দেখবে। সফল হলে তাদের ৪০ হাজার টাকার বিল দিতে হবে। আর সফল না হয় শুধু লেবার বিল দিতে হবে। তারপরও তাদের চেষ্টা করতে দেখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের জন্য নতুন একটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ৬২ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন চেয়ে গত সোমবার মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ বা বরাদ্দের প্রতিশ্রুত পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের হাসপাতালে নতুন টিউবয়েল স্থাপনের মাধ্যমে পানি সমস্যার সমাধান করার কথা বলেন গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী।