পাবলিক পরীক্ষা কিংবা চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষা এলেই মনে শংকা জাগে। যখন শুনতে হয় ক্লাশ ওয়ানের প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে। তখন শংকা জাগা প্রাসঙ্গিক বৈকি? স্কুল-কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অথবা চাকুরীর পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠে। এই বুঝি প্রশ্ন ফাঁসের খবর এলো। প্রশ্ন ফাঁসের জুজু আমাদের পিছু ছাড়ছে না। পরীক্ষা এলেই প্রশ্ন কেনা-বেচার চক্র সক্রিয় হয়। তারা কি প্রশ্ন কেনে এবং কি বিক্রি করে সেটা বড় কথা নয়। ওরা আমাদের শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের মনস্তাত্বিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন ফাঁসের নানা কথা শুনতে হয়েছে। আমরা সেই কথায় গুরুত্ব দিতে চাই না। আমরা চাই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সুন্দর এবং বিতর্ক ছাড়া অনুষ্ঠিত হোক। আমাদের মনের আশঙ্কা দূর করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।
আজ অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কেবল বরিশাল জেলার ৬২ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। ২০০ শূণ্য পদের বিপরীতে এতজন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। সেই প্রতিযোগিতায় কেউ যদি অংশ না নিয়ে (অন্য পথে) উত্তীর্ণ হয়ে যায়, সেটা কি আমদের হতাশায় ডোবাবে না? যদিও এবারের পরীক্ষা নিয়ে সজাগ আছে কর্তৃপক্ষ। আমরা আশা করবো অন্য কোন পরীক্ষার মতো কালো দাগ যেন না পড়ে এই পরীক্ষায়।
ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা নিয় যারা এই শংকা জাগাতে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে প্রশ্ন কেনা-বেচা চক্রের যাতাকলে নিষ্পেষিত হবে আমাদের মেধা। প্রশ্ন ফাঁস হলে সেখানে মেধার মূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ থাকে না। অর্থ মেধাকে পদদলিত করে সামনে যায়। নিয়োগ পরীক্ষার আগাম প্রশ্ন পেয়ে কম মেধাবী একজন চাকুরী পেয়ে গেলে মেধাবীরা কোথায় যাবে? তারা পড়াশুনাসহ চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবে না। তারা জীবনের প্রতি ঘৃণা নিয়ে বাড়ি ফিরবে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
সেরা স্কুল ও কলেজের সেরা শিক্ষার্থীরা সকল পাবলিক পরীক্ষায় সেরা ফল অর্জন করতে পারছে না। স্কুল কলেজে পিছিয়ে থাকা কম মেধাবীরা ফলাফলে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা বোর্ডসহ প্রতিযোগিতামূলক অনেক পরীক্ষায় এমন নজিরও নাকি আছে। জিপিএ না পেয়ে অর্থের বিনিময় জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার প্রামান্য চিত্রও দেখতে হয়েছে। আমাদের এটাও শুনতে হয়, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য হচ্ছে। অর্থের বিনিময় একদল সেই প্রশ্ন সংগ্রহ করেন। আর মেধাবীরা ছিটকে পড়ে। কম মেধাবীরা অর্থের জোরে ভর্তি হয়ে মেধাবীদের ব্যঙ্গ করে। সেরা প্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষার্থীদের খবর নেই। অনেকে প্রশ্ন পেয়ে গর্বও করেন। এই অবৈধ অহংকার কে চূর্ণ করবে? এই দম্ভ না ভাঙতে পারলে আমাদের মেধাবীদের স্থান করে দেওয়া সম্ভব হবে না।
আমরা চাই, আমদের প্রশাসন আরো আন্তরিক হলে প্রশ্ন ফাঁস নামের জুজু আমাদের আর ভয় দেখাতে পারবে না। পরীক্ষা নিয়ে যারা এমন নোংড়া খেলায় মাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সেই উদাহরণ সৃষ্টি করুক সেই প্রত্যাশা করি।