‘আমি ধ্বংস হইয়া গেছি’

কিচ্ছু নাই আমার, আমি ধ্বংস হইয়া গেছি। কথাটি কান্না করতে করতে বলছিলেন অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পেয়ারা বেগম ও মেয়ে স্বপ্না। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর নতুন বাজার আদি শ্মশান এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে আট পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এসময় পোড়া ঘর দেখে কান্নায় ভেঙে পরেন তারা।
পেয়ারা বেগম বলেন, মোর একটু জমি আছেলে হেডু বেইচ্চা কয়দিন আগে ২৪ হাজার টাহায় একটা সুকেচ কিনছি, একটা ফিরিজ কিনছি, বড় টিভিও কিনছি। হেরপর ডয়ারের মইধ্যে দুই লাখ টাকা আছিলো, কাপুর-চুপুর যে হানে যদ্দুর আল্লে সোনা-গয়না সব শ্যাষ, সব ধ্বংস হইয়া গেছে। কিচ্ছু নাই, পড়নের কাপড় হানো নামাইতে পারি নাই। সব শ্যাষ হইয়া গেছে।
►বরিশাল নগরীর আদি শ্মশান এলাকায় অগ্নিকান্ড
►আগুনে পুড়ে নিঃস্ব আট পরিবার
►২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমে টের পাইনাই। পাশের ঘরের শিলা চিক্কইর (চিৎকার) দিয়া কইতে আছিলো আগুন! আগুন! এই হুইন্না (শুনে) চোখ মেইল্লা দেহি মোর ঘরের দোতলায় আগুন জ্বলে। পরে লাফ দিয়া বাইরে পরছি। সবাইরে বোলাইতে (ডাকতে) গেছি।
পেয়ারা বেগম বলেন, ‘পোলা বিয়া করামু। হের জন্য দুই লাখ টাহা রাখছিলাম ডেরাজের মধ্যে। কয় দিন আগে মাইয়াও দেখছি। সব কিছু ঠিকঠাক। গায় হলুদের কাপর-চুপুরসহ যেহানে যা লাগে সব কিছু কিনছি, হেয়া সব শ্যাষ। কিচ্ছু নাই আমার, আমি ধ্বংস হইয়া গেছি।
নগরীর মরকখোলা পোল সংলগ্ন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন বাজার আদি শ্মশান এলাকায় এ অগ্নিকান্ড ঘটেছে। আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে তপন, সুনীল, নিরোধ, পেয়ারা বেগম, কালু, অরুন গোঁসাই ও মো. জামালসহ এই আট জনের ঘরে আগুন লেগে মূহুর্তের মধ্যেই ঘরসহ সব জিনিসপত্র পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ফলে এই অগ্নিকান্ড থেকে পার্শ্ববর্তী আরও অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি ঘর রেহাই পায়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের চটপটি ব্যবসায়ী কালু বলেন, ‘সব পুইড়া শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে আগুন লাগে। ঘরের মালামাল কিছুই বাইর করতে পারি নাই। আমরা পরিবারে চাইর জন লোক সংখ্যা কোনো রহম ঘর দিয়া বাইরে আইছি। চোখের সামনে সব পুইড়া ছাই হইয়া গ্যাছে। কিছুই করতে পারি নাই। এহন কোথায় থাকমু, কি খামু? দুই মাস আগে ব্যাংক দিয়া লোন লইছি; হেই টাহাও পুইড়া গ্যাছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী দুর্জয় বলেন, ‘আমার মাসির ঘরে আগুন লেগে সব কিছু পুড়ে গেছে। তারা ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেনি। মাসির ঘরে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও আট পরিবারের ক্ষতিগ্রস্তর সম্পদ হিসেব করলে প্রায় ২০ লাখ টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো পরিবারই ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেনি।’
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল বিশ্বাস বলেন, ‘চুলা দিয়া আগুন লাইগা আট পরিবারের সবকিছু শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। পরনের কাপড় ছাড়া কেউ কিচ্ছু বের করতে পারে নাই। একটা পাতিলে যে ভাত রাইন্ধা খাইবে; হেই জিনিসটাই নাই। সব শ্যাষ হইয়া গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সুনীল বলেন, ‘ভোর বেলা পূজা দেওয়ার জন্য আমার স্ত্রী ঘুম দিয়া ওঠে। আমি ঘুমাইয়া ছিলাম। আমারে ঠেইল্লা উডাইতেয়াছে-এর মধ্যেই দেহি দাউ দাউ কইরা আগুন জ্বলে। কোনো রহম ছোট পোলাডারে লইয়া ঘড় দিয়া দৌরাইয়া বাইর হইছি। ঘরের সোনা-গয়না, নগদ টাকাসহ প্রায় দুই লাখ টাহার মত পুইড়া ছাই হইয়া গেছে। ঘর তো গ্যাছেই।’
ফায়ার সার্ভিস বরিশালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. বেলাল উদ্দিন জানান, ‘খুব সকালে এ ঘটনা ঘটে। সবাই ঘুমিয়ে ছিলো। তাই পরিবারের লোকজন কোনো রকম বের হয়। তারা ঘর থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারেনি।’ তবে আগুনের সূত্রপাত বা ক্ষয়ক্ষতি কি পরিমাণ হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, অগ্নিকান্ডের সাত থেকে আট ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় কাউন্সিলর পরিদর্শন করতে আসে। অথচ তার বাসা ঘটনা স্থলের কাছেই। তবে পরিদর্শনকালে তিনি কোনো সহায়তার কথাও জানান নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।