কীর্তনখোলা নদীতে দখল পাকাপোক্ত

কীর্তনখোলা নদীতে দখল পাকাপোক্ত

বরিশাল নগরীর ধান গবেষনা রোডের পাকারমোর এলাকায় একটু একটু করে কীর্তনখোলা নদী গ্রাস করার অভিযোগ উঠেছে । দুই বছর আগে জেলা প্রশাসন নদী তীরের ওই অবৈধ দখল গুড়িয়ে দিলেও বর্তমানে আরও আওতা বাড়িয়ে নদী দখল করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী রাইভিউল কবির স্বপনের বিরুদ্ধে। সেখানে কাঠের জেটি এবং গাইডওয়াল নির্মান করে দখল পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। সেখানে আরও গড়ে উঠেছে গোডাউন এবং ডকইয়ার্ড সহ নানা স্থাপনা। এভাবে নদী দখল চলতে থাকলে কীর্তনখোলা নদীর প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ এবং পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হতে পারে বলে আশংকা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নদী তীরের ওই সম্পত্তি নিজের রেকর্র্ডীয় বলে দাবী করেছেন রাইভিউল কবির স্বপন। এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বরেছেন বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক। 

ধান গবেষনা রোডের পাকারমোর এলাকায় দুই বছর আগে কীর্তনখোলা নদীর তীরে ব্লক ফেলে বালু ভরাট করে নদীর তীর দখলের অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ী স্বপনের বিরুদ্ধে। ওই বছরের মধ্য জানুয়ারীতে জেলা প্রশাসন বুলড্রোজার দিয়ে তার অবৈধ দখল গুড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে আর  নদীর অবৈধ দখলের বিষয়ে কোন তদারকী ছিলো না সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের। এই সুযোগে রাইভিউল কবির স্বপন আগের দখল সিমা রেখা ছাড়িয়ে আরও অন্তত ২৫ ফিট নদীর মধ্যে দখল পাকাপোক্ত করেন। সেখানে ব্লক গেথে গাইডওয়াল করে বালু ভরাট করেন তিনি। পাশেই নির্মান করা হয়েছে কাঠ ও বাঁশের একটি জেটি। ওই জেটি দিয়ে জাহাজে আসা কয়লা, পাথর ও বালু খালাস করা হচ্ছে। এর পাশেই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একটি ডকইয়ার্ড এবং একাধিক গোডাউন। 

বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, কীতর্নখোলা নদীর পাকারমোড় এলাকায় দুই বছর আগে নদী তীরের অনেক জায়গা দখল করে নির্মিত স্থাপনা জেলা প্রশাসন ভেঙ্গে দিয়েছিলো। তখন কথা ছিলো অবৈধ দখলদার নিজেই বাকী স্থাপনা সরিয়ে ফেলবে। কিন্তু সে তার অবৈধ দখল সরিয়ে না নিয়ে এবার নদীর তীরে আরও অন্তত ৩০ ফিট জায়গা জুড়ে ব্লক ফেলে গাইড ওয়াল নির্মান করে বালু ভরাট করেছেন। এভাবে দখলদাররা ক্রমাগত কীর্তনখোলা নদী দখল করছে। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৩শ’ ২০ জন অবৈধ দখলদারের তালিকাও হয়েছে। কিন্ত অজ্ঞাত কারনে তাদের উচ্ছেদে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। নদীর প্রবাহ রক্ষায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে এখনই কার্যকর ভূমিকা নেয়ার দাবী জানান তিনি। 

বরিশাল পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) জেলা সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, আইন অনুযায়ী একটি নদীর জোয়ারের সময় পানির স্থর থেকে তীরবর্তী ১০ ফুট জয়গাকে ফোরশোর বলা হয়। এই ১০ ফুট এলাকার মধ্যে কেউ কোনভাবে নদীর তীর দখল বা কোন স্থাপনা নির্মান করতে পারবে না, যদি ওই জমি কারোর নিজেরও হয়ে থাকে। 

তিনি আরও বলেন, কীর্তনখোলা নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা এবং যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কীর্তনখোলা নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং নদীর তীর দখলমুক্ত রাখতে সকল ধরনের অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে গুড়িয়ে দেয়ার দাবী জানান পরিবেশ আইনবিদ লিংকন গায়েন। 

অভিযুক্ত দখলদার মো. রাইভিউল কবির স্বপন বলেন, নদী তীরে তিনি তার নিজের রেকর্ডীয় জমি রক্ষার জন্য গাইডওয়াল নির্মান করেছেন। নদীর মধ্যে আরও  রেকর্ডীয় জায়গা রয়েছে তার। এ কারনে ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে নদী তীরে তার জমি পরিমাপ করে সিমানা পিলার স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু গত ২ বছর্ওে জেলা প্রশাসন থেকে তার নদী তীরের সম্পত্তির সিমানা পিলার স্থাপন করে দেয়নি জেলা প্রশাসন। নদী তীরে নিজের রেকর্ডীয় সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষন এবং ব্যবহারের জন্য অবিলম্বে সিমানা পিলার স্থাপনের দাবী জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক) শহিদুল ইসলাম বলেন, নদী তীরে কারো ব্যক্তিগত জমি হলেও আইন অনুযায়ী তিনি সেখানে কোন স্থাপনা র্নির্মান করতে পারবে না। নগরীর পাকারমোড় এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।