দেশে রাশিয়ার তেল শোধন সম্ভব নয়

রাশিয়ার তেলের ঘনত্ব অনেক বেশি, যা দেশের যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিশোধন করা যাবে না বলে জানিয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-ইআরএল।
রাশিয়া থেকে আসা তেলের নমুনা ল্যাবে পরীক্ষার পর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসিতে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে ইআরএল এ মন্তব্য জানিয়েছে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, “আমরা ১৪টা আইটেম টেস্ট করেছি। আমাদের মেশিনারিজ অনেক পুরাতন। এই মেশিনারিজ দিয়ে এটা রিফাইন করা সম্ভব না। টেস্ট করে আমরা প্রতিবেদনটা বিপিসিতে জমা দিয়েছি। বিপিসি এটা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়কে জানাবে।
যুদ্ধের সংকটের মধ্যে মে মাসে রাশিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে অপরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব পায় বাংলাদেশ।
তবে রাশিয়ার তেল বাংলাদেশের রিফাইনারিতে পরিশোধনযোগ্য নয় জানিয়ে ওই প্রস্তাব সে সময় এড়িয়ে যাওয়ার ইংগিত দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
এরপর রাশিয়া থেকে পরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব আসে, যা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়। এরইমধ্যে গত মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার তেল বাংলাদেশে পরিশোধনযোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য নমুনা পাঠানো হয়। ওই নমুনা ১ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন রিফাইনারি পৌঁছানোর ল্যাবে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, আমাদের অনেকদিনের পুরাতন মেশিনারিজ। আমরা যেটা রিফাইন করি সেটার সঙ্গে ম্যাচ করে না। আমরা আমদানি করি সৌদি আরব থেকে এএলসি (অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রড) ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মারবার। ওদের ক্রডটা হালকা। আর এদেরটা (রাশিয়ান) গাঢ়। ঘনত্বে সমস্যা। রাশিয়ারটার ঘনত্ব অনেক বেশি।
এছাড়া ক্রুডের মধ্যে ডিজেল ও ওপরের গ্যাসোলিন কম থাকায় ইআরএলের সঙ্গে কোনওভাবে ম্যাচ করছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইস্টার্ন রিফাইনারির বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন তেল পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। অপরিশোধিত তেলের ঘনত্বের মাত্রা বোঝানো হয় এপিআই (আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউট) গ্র্যাভিটি দিয়ে। এপিআই গ্র্যাভিটি যত বেশি হবে, ওই তেল তত হালকা হবে। এই মান ১০ এর বেশি হলে তেল পানিতে ভাসবে। আর ১০ এর কম হলে তা পানির চেয়ে ভারী হওয়ায় তলিয়ে যাবে।
ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এনার্জি ইনসাইটে দেখা যায়, রাশিয়ার পাঁচ ধরনের অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ইএসপিও এর এপিআই গ্র্যাভিটি ৩৬, সাখালিন ব্লেন্ডের ৪৪ দশমিক ৭, সাইবেরিয়ান লাইটের ৩৪ দশমিক ৮, সোকল এর ৩৫ দশমিক ৬ এবং ইউরালস এর ৩০ দশমিক ৬। আর অ্যারাবিয়ান মারবানের এপিআই গ্র্যাভিটি ৪০ দশমিক ৪।