নেত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারীদের ছাড় নয়

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের কটূক্তির প্রতিবাদে নোয়াখালীতে বিশাল সমাবেশ করেছেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সদর-সুবর্ণচর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমার নেত্রীকে গালাগালি করা আর আমার কর্মীদেরকে গালাগালি করা একই কথা। বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে শেখ হাসিনাকে গালি দিলে আমাদের গায়ে লাগে। নেত্রীর বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
নিজেকে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘তারা ভেবেছিল কমিটি থেকে বাদ দিলে আমার সাথে কেউ থাকবে না। তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’
এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপির লোকজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শোকের মাসে অশ্লীল কটূক্তি করেছে আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমি সিঙ্গাপুর থেকে ছুটে এসে এই প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছি। সদর-সূবর্ণচর নেতাকর্মীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক ও প্রস্তুতি সভা করে এই সভার ডাক দিয়েছি। প্রতিবাদ সভা বিশাল জনসভায় পরিণত হয়েছে।'
প্রতিবাদ সমাবেশে লক্ষাধিক লোক উপস্থিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের নিকট কৃতজ্ঞ এবং চিরঋণী হয়ে গেলাম। আপনারা আমার নেত্রীর জন্য এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।’
প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলের কনিষ্টপুত্র বাহাউদ্দিন খেলন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিএনপির লোকজন কটূক্তি করেছে কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ কোন প্রতিবাদ সভা করতে পারেননি। আপনাদের জনপ্রিয় নেতা একরাম চৌধুরী বিশাল সমাবেশ করে আজ দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি এখানে একরাম চৌধুরীর বিকল্প নেই।’
নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সামছুদ্দিন জেহনের সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছেরের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাইম উদ্দিন, যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলের কনিষ্টপুত্র বাহাউদ্দিন খেলন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আরমান, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সুজন ও আবুল হাসনাত আদনান, নেয়াজপুর ইউনয়নের চেয়ারম্যান আমির হোসেন বাহাদুর, কাদির হানিফ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম, আল্ডারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, একলাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দিপু, অশ্বদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিম মাহমুদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়াম্যানরা বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেন। জেলা শহর মাইজদী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে রওশনবাণী সিমেনা হল পর্যন্ত এলাকায় মানুষের ঢল নামে। বিকেল ৩টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে। এক সময় প্রতিবাদ সমাবেশ পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে জেলা কমিটির তিন বারের সাধারণ সম্পাদক সদর-সুবর্ণচর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও তার অনুসারীদের সাথে আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সাথে দূরত্ব দেখা দেয়। যার কারণে একরামুল করিম চৌধুরীকে কমিটির এক নম্বর সদস্য করা হলেও তিনি এবং তার অনুসারী কোন সদস্য সভায় অংশ নেননি।
এ পরিস্থিতিতে ১০ সেপ্টেম্বর জেলা সদরে এবং ১২ সেপ্টেম্বর সুবর্ণচরে বিএনপির সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদে সমাবেশ আহবান করেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। সমাবেশ দুটিতে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে নিজেদের মধ্যে মান অভিমান ভুলে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
তবে, আজকের প্রতিবাদ সমাবেশে একরামের অনুসারী ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি।