বরিশালে সাবেক মেয়র কামাল ও তার পুত্রর দুর্নীতি তদন্ত শুরু

বরিশালে সাবেক মেয়র কামাল ও তার পুত্রর দুর্নীতি তদন্ত শুরু
বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) সাবে মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও তাঁর পুত্র কামরুল আহসান রূপমের দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১১ জুন দুদক বরিশাল কার্যালয় এসংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে সিটিকরপোরেশনে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপমের মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ না করেও বিল প্রদান, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে ১০ভাগ হারে উৎকোচের বিনিময়ে ২০৮ প্রকল্পের টাকা পরিশোধসহ দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজীর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ওই অভিযোগ তদন্তের জন্য সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত সংশ্লিস্ট কাগজপত্র চেয়েছে দুদক। এদিকে বরিশাল দুদকের পৃথক স্মারকে সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের অবৈধ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ গ্রহণ এবং জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চাওয়া হয়। বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ১৬ এপ্রিল এই তথ্য ও কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করেন দুদক বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। সাবেক মেয়র কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মেয়র থাকাকালে অন্যান্যদের সহযোগিতায় তার ছেলে রূপমের মালিকানাধীন ৪টিসহ সিকদার এন্টারাপ্রাইজ, মিতুসী এন্টারপ্রাইজ, মোমেন সিকদার, রশিদ এন্ড সন্স, এরিমা ট্রেডিং করপোরেশন এবং মেসার্স জেড এ এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে অবৈধভাবে ঠিকাদারী কাজ দিয়েছেন। এরমধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া আরসিসি গার্ডার ব্রীড (সিটি গেট) ও আরসিসি গার্ডার ব্রীজ (দপদপিয়া), নথুল্লাবাদ-আমতলা সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন, সিমেন্ডেট সিটি এ্যারেজমেন্ট বৃক্ষ রোপন, বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম কমপ্লেক্স, সিসি টিভি স্থাপন প্রকল্প, শের-ই-বাংলা সড়ক উন্নয়ন (নথুল্লাবাদ থেকে কুদঘাটা পর্যন্ত), রাজাবাহাদুর সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন গ্রীণ সিটি পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বিল দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার অনুমোদনক্রমে তদন্ত শুরু করে বরিশাল দুদক। তদন্তের স্বার্থে সাবেক মেয়র পুত্র রূপমের নেওয়া বিভিন্ন কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারের (সত্ত্বাধীকারী) নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর, ওইসব কাজের প্রাথমিক চুক্তিমূল্য, সংশোধিত চুক্তিমূল্য, ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিলের পরিমাণ, কাজের বর্তমান অবস্থা এবং চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের কাছে। একই সাথে মেয়র কামাল দায়িত্বে থাকাবস্থায় সিকদার এন্টারপ্রাইজ, মিতুসী এন্টারপ্রাইজ, মোমেন সিকদার এবং রশিদ এন্ড সন্সের অনুকূলে যেসব কার্যাদেশ দিয়েছেন তার একটি তালিকা এবং সিটি করপোরেশন থেকে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে জামানত বাবদ প্রাপ্ত অর্থ জমা রাখা ব্যাংক হিসেবের ২০১৩ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত বিবরণী জানতে চাওয়া হয় দুদকের চিঠিতে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল এবং তার ছেলে কামরুল আহসান রূপমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে রিং দেওয়া হলেও দুইজনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কামাল ও তার ছেলের দুর্নীতি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছেন সমন্বিত জেলা দুদকের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল। তদান্তাধীন বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি তিনি। এদিকে মেয়র কামালের সময় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা আব্দুল মোতলেব হাওলাদারের বিরুদ্ধে অবৈধ বিএসসি ইঞ্জিনিংয়ারিং সনদ গ্রহন এবং জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছেন দুদক বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ তদন্তের জন্য গত ১৬ এপ্রিল উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিসিসি’তে আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বিসিসি/ইডি/৩৭৫/১৫ স্মারক এবং২০১৫ সালের ১৬ মার্চ বিসিসি/ইডি/৪৪৩/১৫ স্মারক মোতাবেক দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, প্রাক্কলন, প্রাপ্ত দর প্রস্তাব, দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন, নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড, চুক্তি, কার্যাদেশ, পরিমাপ বই ও বিল-ভাউচারের সত্যায়িত ফটোকপি চেয়েছেন। তদন্তের বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজী হননি উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বিসিসির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, তিনি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।