মৃত্যু ডেকে যায় আমায়

মৃত্যু ডেকে যায় আমায়
-এইচ বি রিতা
আরামদায়ক বিছানাটির পাশে দাঁড়িয়ে
কেউ একজন বলল,
হে মানবী। তৈরী হও। তোমাকে মরতে হবে।
চমকে উঠলাম। মনে হল,
এই বুঝি যুগ ধরে মগজে লালিত অ্যানিউরিজম ফেটে
গেল হঠাৎ
বললাম, কি আশ্চর্য্য! কেন মরতে হবে?
অদৃশ্য কণ্ঠটি চেঁচিয়ে উঠলো,
সবাইকে মরতে হবে একদিন।
বললাম, শুনুন! সবাই মরছে, মরুক
ওরা মরছে ক্ষুধার জ্বালায়
নিরাপদ আশ্রয়, চিকিৎসার অভাবে
আমার অভাব নেই। ফ্রিজ ভর্তি খাদ্য আছে
বিশাল নিরাপত্তার বেষ্টনীতে বাড়িও আছে
আর ওষুধ? হাহ!
ইউ হ্যাভ নো ড্যাম আইডিয়া! সব মজুদ আছে!
অদৃশ্য শক্তিটি হেসে বলল,
শুধু কি শরীরের অক্ষমতায় মানুষ মরে?
বুঝে গেলাম সে বড় চতুর!
বললাম, নাহ!
মানুষ মনের যাতনায়ও মরে
কিন্তু আমার কোন যাতনা নেই। আমি সুখী।
হে মানবী। তবু তোমাকে মরতে হবে
এবার সত্যিই অ্যানিউরিজম লাফাতে শুরু করলো
বললাম,
উঠোন ছাপিয়ে শৈশবের জলধারায় স্নান হয়নি এখনো
এক ঝটকায় ডাকা হয়নি বিষাদের মেঘ কখনো
কুয়াশার কম্বলে চাঁদমুখ ঢেকে
নিবিড় আলিঙ্গনে দেয়া হয়নি প্রেমিকের পদ যুগলে গিঁট
আকাশের কান্নায় এখনি ভেঙ্গে দিব সিম্ফনী?
হুয়্যাট দ্য ফাক ম্যান?
অদৃশ্য কণ্ঠ হাসতে লাগল
বলল, শোন মেয়ে
এই যে দেখছো শত শত ফুটন্ত গোলাপ নেতিয়ে পড়ছে
রোজ
শূন্যতার একা ঘরে বুকের পাঁজর মুরে গায়ে
ভাবছো, তারাও পৃথিবীর বুকে ছিল একদিন?
না রে বোকা মেয়ে! এ শুধু বিভ্রম
পৃথিবীর বুক বলে কিছু নেই। সে এক সোফোক্লিশ।
যেতে হবে, চলো যাই।
বললাম, কত কি শখ রয়ে গেল
ভ্রাতৃত্ব অর্পণে ইনসানিয়াতের ল্যাজ নাড়া
শীৎকারের জটিল রাতে কাঁচালঙ্কার তীব্রতা
এখনি বলছো যাবো? কি নির্মম তুমি?
অদৃশ্য তিনি বললেন,
মিথ্যাদিন, মিথ্যারাত
অভিমানী নোনাজল শরীরে লেপ্টে আর কত সংঘাত
বলো?
ঢের হয়েছে মনের কার্নিশে মেডুসার নৃত্য
শুক্লাকাশে অহেতুক খুঁজেছো নক্ষত্রের রাত
ঢের হয়েছে। ঢের হয়েছে।
অগত্যা আমি উঠে দাঁড়ালাম।
বছরের পর বছর ধরে মুমূর্ষু কারাগারের মায়া ত্যাগে
বললাম, তবে চলো।
একাকীত্বের গর্জনে যেদিন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়বে,
মায়ার বাসর জ্বালিয়ে জলজ সংসারে বেঁচে থাকার প্রহসনে
পশুগুলো বুঝে নিবে জোৎস্নার আড়ালে লুকানো
মানুষগুলোর গল্পকথা
এই আমি এই শহর
এই পৃথিবী-তুমি-তোমরা, একদিন,
অবরুদ্ধ অশ্রুতে লাশ কাটা ঘরে
ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে;
ঘুমিয়ে পড়বে অভিমান বুকে।
প্রকৃতি খিলখিলিয়ে হেসে যাবে অন্য পৃথিবীর দিকে।